আলোচিত অনেকেই দল ও জোটের মনোনয়ন পাননি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮

মোফাজ্জল হোসেন, ইনাম আহমদ চৌধুরী, এম মোরশেদ খান ও বেবী নাজনীনদল থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের যাচাই–বাছাইয়ে বৈধ প্রার্থী হয়েও বেশ কয়েকজন আলোচিত প্রার্থী বাদ পড়েছেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৌড় থেকে। দল ও জোটের নানা সমীকরণে শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত মনোনয়ন পাননি তাঁরা। স্থানীয় ও জাতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত এসব প্রার্থীর কারও কারও সমর্থকেরা বিক্ষোভও করেছেন।

চারদলীয় জোট সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এম মোরশেদ খান। যাচাই–বাছাইয়ে বাদ পড়ার পর আপিল করে প্রার্থিতা ফিরে পেলেও দলের মনোনয়ন পাননি। তাঁর জায়গায় চট্টগ্রাম–৮ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহসভাপতি আবু সুফিয়ান।

বর্তমান সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্ত তালিকায় বাদ পড়েছেন। তাঁর বদলে চাঁদপুর–২ আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন পান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. নুরুল আমিন।

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব সমশের মবিন চৌধুরী বিএনপির রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পর সম্প্রতি যোগ দেন বিকল্পধারায়। সিলেট–৬ আসনে দল থেকে প্রার্থী হন তিনি। তাঁর দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মিত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। মহাজোট থেকে তিনটি আসন পেয়েছে বিকল্পধারা, তাতে নেই সিলেট–৬। এ আসনে আওয়ামী লীগের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তবে গতকাল শেষ দিনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি সমশের মবিন।

সাবেক সচিব ও প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী সিলেট–১ আসন থেকে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়ে আলোচনায় ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এ আসনে দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর।

মনোনয়ন জটিলতার জের ধরে গতকাল রংপুর–২ আসন থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু।

নীলফামারী–৪ আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন পাননি সংগীতশিল্পী বেবী নাজনীন। এখানে মনোনয়ন পেয়েছেন আমজাদ হোসেন সরকার। মেয়র পদ থেকে পদত্যাগের জটিলতার কারণে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছিল। এরপর নির্বাচন কমিশনে আপিল করেও ব্যর্থ হন। সর্বশেষ গতকাল উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তিনি।

চাঁদপুর–১ আসনে বিএনপির সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলনের প্রার্থিতা বৈধ হলেও দল তাঁকে মনোনয়ন দেয়নি। তাঁর আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মোশাররফ হোসেন। দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও নির্বাচন সামনে রেখে দেশে ফিরে
আসেন এহছানুল হক। বর্তমানে তিনি কারাগারে। তাঁর সমর্থকেরা বিএনপি কার্যালয়ে তালা মেরে দিয়েছিলেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন তরুণ প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন ঢাকা–৬ আসনে। কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। গতকাল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ইশরাক।

বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক ঢাকা–১৪ থেকে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন
পাননি। ঢাকা–১৪ আসনে সাবেক সাংসদ এস এ খালেকের ছেলে সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক মনোনয়ন পেয়েছেন।

ঝিনাইদহ–৩ আসনে সংগীতশিল্পী মনির খান বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন জামায়াতের মতিয়ার রহমান। ক্ষোভে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদ থেকে গতকাল পদত্যাগ করেছেন মনির খান।

কুমিল্লা–৪ আসনে বিএনপির চারবারের সাংসদ মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী। কিন্তু ঐক্যফ্রন্টের শরিক জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। মুন্সীর সমর্থকেরা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির চার আলোচিত প্রার্থী আবুল কালাম, তৈমুর আলম খন্দকার, গিয়াস উদ্দিন ও শাহ আলমের কেউ মনোনয়ন পাননি। নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনের সাবেক সাংসদ আবুল কালামের জায়গায় মনোনয়ন পেয়েছেন ঐক্যফ্রন্টের শরিক নাগরিক ঐক্যের নেতা এস এম আকরাম। নারায়ণগঞ্জ–৪ আসনের সাবেক দুই সাংসদ গিয়াসউদ্দিন ও শাহ আলমের বদলে এবার মনোনয়ন পেয়েছেন ২০–দলীয় জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মনির হোসেন কাশেমী। নারায়ণগঞ্জ–১ আসনে তৈমুর আলম খন্দকার প্রাথমিক মনোনয়ন পেলেও চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান। তৈমুর আলমের সমর্থকেরাও শনিবার বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেছেন।

মন্তব্য

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮

    একমাত্র ব্যাতিক্রমী কান্ড করে স্বার্থপর রাজনীতিক শিল্পি মনির খান উপহাসের পাত্র হয়েছেন।

  • image

    Ishaque

    ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮

    সিলেট-১ আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী দেয়ার রেওয়াজ থেকে বিএনপি সরে আসলো। আওয়ামীলীগের হেভিওয়েট প্রার্থী আব্দুল মোমেনের সাথে বিএনপির আবদুল মুক্তাদীর পেরে উঠবেন বলে মনে হয়না।সিলেট থেকে সবসময় উচ্চ শিক্ষাগত ও উচ্চতর পেশাগত ব্যাক্তিরা বিগত ৩০ বছর ধরে নির্বাচিত হয়ে আসছেন যারা পরবর্তিতে সরকার গঠন করেছেন এবং স্পিকার-মন্ত্রী হয়েছেন। সাইফুর রহমান (বিএনপির অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী), হুমায়ুন রশিদ চৌধুরী (আওয়ামীলীগের স্পিকার) ও আবুল মাল আব্দুল মুহিত (আওয়ামীলীগের অর্থ মন্ত্রী) এর উত্তরসূরি হিসেবে আওয়ামীলীগের আব্দুল মোমেন (সাবেক রাষ্ট্রদূত) ধারাবাহিকতা ধরে রাখলেও বিএনপির আবদুল মুক্তাদীর এর প্রোফাইল তেমন বেশি কিছু নয়। ইনাম আহমদ চৌধুরী (সাবেক সচিব) অনেক যোগ্য ছিলেন। সিলেটের ভোটার হিসেবে বিএনপির নমিনেশনে আমি হতাশ হয়েছি!

    • image

      নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

      ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮

      যেহেতু জোটবদ্ধ নির্বাচন তাই দল যাকে যোগ্য মনে করেছে তাকেই মনোনয়ন দিয়েছে, সাথে রেজা কিবরিয়াতো আছেই!

    • image

      নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

      ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮

      ঢাকায় বসে আমরা সব যেমন দেখি এলাকায় পরিবেশ তেমন না, খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর সাহেবের পিতা খন্দকার আব্দুল মালিক ৯১ সালে এই আসনে এমপি ছিলেন, এলাকায় তাদের বেশ প্রভাব আছে এ কারনেই জাতীয় ভাবে পরিচিত প্রার্থী না দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালী প্রার্থী দেয়া, তাছাড়া উনিও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা, পদের দিক থেকে তাকে ছোট ভাবার কারন নাই, হয়ত জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিত না, আর দল ক্ষমতায় না থাকলে জাতীয় ভাবে পরিচিতি পাবার সুযোগ খুব কম

    • image

      Ishaque

      ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮

      ভাই আমি সিলেটে থাকি, জন্ম, বেড়ে উঠা, পড়ালেখা, চাকরী সব এখানে। তাই আমি ভালভাবেই জানি আব্দুল মুক্তাদিরের দৌড় কতটুকু। তিনি মেয়রও নির্বাচিত হবেন না। মেয়র আরিফুল হক আমাদের কাছে তার চেয়ে ঢের জনপ্রিয়। প্রার্থী নতুন হলে প্রোফাইল ভারী থাকতে হয় আর সে ক্ষেত্রে ইনাম আহমেদ চৌধুরী আব্দুল মুক্তাদিরের চেয়ে অনেক ভারী ছিলেন আর বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যানও তিনি। ইতিমধ্যে আব্দুল মুক্তাদির অর্থমন্ত্রীর মত সজ্জন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো শুরু করেছেন আর তাতে তার নিজের আসল পরিচয় বের হওয়া শুরু হয়েছে। সিলেটে-১ এর কোন প্রার্থীই কোনদিন ব্যাক্তিবিরোধ করেননি।প্রায়াত সাইফুর সাহেব ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী মুহিত সাহেব কোনদিনই কারও নাম ধরে কিছু বলেননি। মেয়র নির্বাচনেও এইধারা ছিল। এইতো কয়েকদিন আগে প্রথম আলো সিলেটের ক্লিন রাজনীতি নিয়ে আর্টিকেল ছাপাল। কিন্তু মুক্তাদির সাহেব সেই কুথসিত রাজনীতি শুরু করেছেন। আমি নিরপেক্ষ ভোটার হিসেবে ইনাম আহমেদের পরিবর্তে আব্দুল মুক্তাদিরের নমিনেশনে হতাশ হয়েছি।

  • image

    Sohel

    ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮

    মনির খানকে কেন বাদ দেয়া হলো জানাবেন Please.

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮

    এরা কমবেশি সবাই দল ও দেশের স্বার্থে মেনে নিয়েছেন।

  • image

    Habibul Alam

    ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮

    বি এন পির জন্য এবারের নিরবাচনে মনোনয়ন দেওয়া মানে অগ্নি পরীক্ষা।তারা এখন পর্যন্ত ভাল ভাবেই চালিয়ে নিয়েছেন উনারা।

  • image

    Mansoor Ahmed

    ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮

    "দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকলেও নির্বাচন সামনে রেখে দেশে ফিরে আসেন এহছানুল হক।" এরকম বসন্তের কোকিল অনেক আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

  • image

    Ibrahimkhalil

    ১০ ডিসেম্বর, ২০১৮

    এহসানুল হক মিলন ছাড়া কচুয়া আমার মনে হয়, বি এন পির এমন শক্ত প্রার্থী নাই। প্রার্থী বাছাই বি এন পির ভুল সিদ্ধান্ত

সব মন্তব্য