শিল্পপতিদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কর্মচারী, মানুষের চাঁদায় চলছে প্রচারণা

সফি খান, কুড়িগ্রাম ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

কুড়িগ্রাম-৩ আসনের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন দোকান কর্মচারী দেলওয়ার হোসেন। ছবি: প্রথম আলোকুড়িগ্রাম-৩ আসন উলিপুরে ধনাঢ্য প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন স্থানীয় দোকান কর্মচারী দেলওয়ার হোসেন। প্রচারণাসহ নির্বাচনের অন্যান্য খরচ সংগ্রহে রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্থানীয় মানুষের সহায়তা চাচ্ছেন দেলওয়ার। এই প্রার্থীর এমন ব্যতিক্রমী প্রচারণা স্থানীয় মানুষের মধ্যে আলোড়ন তুলেছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মনোনীত প্রার্থী এই দেলওয়ার হোসেন। তাঁর প্রতীক কাস্তে। আজ রোববার সকালে উলিপুর উপজেলা সদরের গবার মোড়ে গিয়ে দেখা যায়, দেলওয়ার হোসেন হ্যান্ডমাইকে বক্তব্য দিচ্ছেন। সেখানে সমবেত মানুষের অধিকাংশই রিকশাওয়ালা, পথচারী, দিনমজুর ও দোকানদার। কাস্তে প্রতীকে ভোট দিতে জনগণকে আহ্বান জানিয়ে দেলওয়ার বলেন, ‘আপনারা ভোট দিয়ে যাদের জাতীয় সংসদে পাঠান, তারা নিজেদের ভাগ্যের উন্নতি ঘটায়। গরিবের কিছু হয় না। আমাদের নদনদীর পার ভাঙে, ঠিক হয় না। চরের মানুষের উন্নয়নেও পরিকল্পনা নাই।’

দেলওয়ার আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ। অথচ কুড়িগ্রাম দেশের সবচেয়ে দরিদ্র এলাকা। সেই জেলার উন্নয়নে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? একমাত্র টেক্সটাইল মিলটি দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ। কার স্বার্থে বন্ধ? ঢাকায় তো একটাও বন্ধ করা হয়নি। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে আদমজী জুটমিল খুলে দেওয়া হবে? খোলে নাই। তা হলে আমার শ্রমিক যাবে কোথায়?’

বক্তব্যের একপর্যায়ে প্রচারণা চালানোর জন্য টাকা চান দেলওয়ার। তিনি বলেন, ‘আপনারা আমাকে ২টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা দান করুন। এই টাকায় আমি পোস্টার ও প্রচারণা চালিয়ে যাব। আমার নমিনেশনের টাকাও শ্রমিক ভাইরা দিয়েছে। এ পর্যন্ত ৫২ হাজার টাকা দিয়েছে।’

দেলওয়ার হোসেনের কথায় এগিয়ে আসেন কয়েকজন। দিনমজুর আজমত আলী দেন ১০ টাকা। কেন দিলেন? প্রতিবেদকের এই প্রশ্নের জবাবে আজমতের উত্তর, ‘এমার বিরুদ্ধে যারা দাঁড়াইছে, সবাই শিল্পপতি, ধনী মানুষ। এ দোকান কর্মচারী। গরিব মানুষ। সেই জন্য ট্যাকাও দিলাম, ভোটও দেমো।’ আরেক দিনমজুর আবুল কাশেমও (৫১) দেন ১০ টাকা। কাশেম বলেন, ‘সবাই ভোট নিয়া চলি যায়, আর আইসে না। ট্যাকার পাহাড় বানায়। তারা ভোটারোক ট্যাকা দেয়। এমরা রাস্তাত দাঁড়ে ভোটের খরচের জন্য ট্যাকা চায়।’কুড়িগ্রাম-৩ আসনে ব্যতিক্রমী ভোটযুদ্ধে নেমেছেন দোকান কর্মচারী দেলওয়ার হোসেন। তিনি মানুষের সহযোগিতায় নির্বাচন করছেন। ছবি: প্রথম আলো

দেলওয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি উলিপুরে আব্দুর রাজ্জাক পিটারের বীজের দোকানের কর্মচারী। যে সামান্য বেতন পাই, তাই দিয়ে সংসার চালাই। দীর্ঘ ৩৮ বছর থেকে কমিউনিস্ট পাটির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। গরিব ও শ্রমিক শ্রেণির অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করছি। আমার তিন মেয়ে। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছে শুভাকাঙ্ক্ষীরা। এক মেয়ে লেখাপড়া করছে। সারা বছর মানুষের জন্য কাজ করি। তারা আমাকে ভালোবাসে।’

দেলওয়ার হোসেনের প্রতিপক্ষ শিল্পপতি আক্কাস আলী সরকার। তিনি জাতীয় পাটি থেকে লাঙল মার্কা নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। কাশেম গ্রুপের কর্ণধার ও ব্যবসায়ী তাসভীর-উল ইসলাম বিএনপি থেকে ধানের শীষ পেয়েছেন। ওদিকে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন। হলফনামা অনুযায়ী, শুধু কৃষিখাত থেকেই মতিনের বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

আর দেলওয়ার হোসেনের দেওয়া হলফনামায় সম্পদ বলতে দেখানো হয়েছে মোটে ৬ শতাংশ জমি। এটি তাঁর বাড়ি। তাঁর স্ত্রী রশিদা বেগম পৈতৃক সূত্রে পেয়েছিলেন মাত্র ৪ আনা সোনা। সেটিও বিক্রি করেছেন বলে জানান দেলওয়ার। তিনি বলেন, ‘এগুলো সব হলফনামায় দেওয়া আছে।’

মন্তব্য

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

    Great. People should vote him.

  • image

    রিদওয়ান বিবেক

    ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

    আদমজী জুটমিল চালু হয়নি কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বন্ধ করে ট্যাক্স ফ্রি গাড়ির সুবিধা ঠিকই চালু হয়েছে।এটাই হচ্ছে উন্নয়ন।

    • image

      নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

      ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

      রিদওয়ান বিবেক এর ম্যাডাম জিয়া আদমজী জুটমিল বন্ধ করেছিল।

    • image

      রিদওয়ান বিবেক

      ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

      খালেদা জিয়ার সিদ্ধান্ত যে শতভাগ সঠিক ছিল তা এই সরকারের আমলেও আদমজী জুট মিল চালু না হওয়াতেই প্রমাণিত।

    • image

      নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

      ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

      @অনিচ্ছুক, রিদওয়ান বিবেক এর ম্যাডাম আদমজী জুটমিল বন্ধ করেছিল! ওকে, কিন্তু আপনার ম্যাডাম খুলল না কেন?

    • image

      শিপন England

      ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

      আদমজি জুট মিল বন্দ করেছে আপনার স্বসিক্ষিত নেত্রি , ইহা মনে হয় ভুল করেই পোষ্ট করেছেন ? মিথ্যায় আপনাদের অবস্থা কি হয় ভেবে দেখবেন ?

  • image

    Azizul Hoque

    ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

    what he will do in the parliament ?

  • image

    Mamun

    ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

    Great - need more good common people to be involved in politics. But communist system not good, doesn’t work.

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

    এমন লোক আমার এলাকায় দাঁড়াইলে তাকেই ভোট দিতাম।।।

    • image

      নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

      ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

      বামপন্থি জোটের সিংহভাগ প্রার্থী এইরকম খেটে খাওয়া মানুষ।

  • image

    খন্দঃ আঃ মুত্তালিব

    ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

    উনিও নিজের ভাগ্য পরিবর্তন করতেই নির্বাচনে দাড়িয়েছেন,প্রসেস একই

  • image

    Muhammad Shahriar Zaman

    ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

    much better candidate than mashrafe

  • image

    ahmed

    ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

    দেলওয়ার হোসেন, হিরো আলমদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে সাধারণ মানুষের মঙ্গল হবে।

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

    সংসদে গিয়ে তিনি কী করবেন?

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

    Seems genuine gentleman.

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

    জনাব মুত্তালিব, আপনার মতো সবাই দলকানা না।

  • image

    Mohammed Saydur Rahaman

    ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

    এমন লোক আমার এলাকায় দাঁড়াইলে তাঁকেই ভোট দিতাম

  • image

    Ripan Debnath

    ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

    I'll vote for such candidate of my seat.

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২২ ডিসেম্বর, ২০১৮

    দেশের পরিবর্তন চাইলে দশের পরিবর্তন হতে হবে সাথে সাথে। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলার সৎ সাহস না থাকলে জনগণের কিছুই হবে না। লাথি খেয়েও বিএনপি জামায়াতে ভোট দিয়েছে জনগণ, আওয়ামীলীগেও দিচ্ছে। বিগত দশ বছরে অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে ১০০% সত্য কিন্তু সামাজিক ইনস্টিটিউটগুলো ধ্বংস হয়েছে। উন্নয়ন টেকসই করতে মানবিক বাংলাদেশ প্রয়োজন, মানবিক সাংসদ প্রয়োজন। দেলোয়াররা মানুষের ভালোবাসা পাবে, কোটিপতিদের রোষানলে পুড়বে কিন্তু ভোট পাবে না, এটাই আমাদের মত মূর্খ জাতির জাতিগত আচরণ।

সব মন্তব্য