আর মাত্র কয়েক দিন পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ-তাড়াশ) আসনে বিএনপির প্রার্থী তিনবারের সাবেক সাংসদ প্রবীণ আবদুল মান্নান তালুকদার। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নতুন মুখ মো. আবদুল আজিজ। দুই পক্ষেই জোর প্রচারণা চলছে।
রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলা নিয়ে সিরাজগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসন। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হয়ে ভোটের মাঠে নামেন ঠিকাদার আবদুল মান্নান তালুকদার। আওয়ামী লীগের প্রার্থী ১৯৮৬ সালের নির্বাচিত সাংসদ ইসহাক হোসেন তালুকদারকে সামান্য ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে চমক সৃষ্টি করেন তিনি। পরে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনেও তিনি জয়লাভ করেন। তবে ২০০৮ সালের নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হয়ে ইসহাক হোসেন তালুকদার প্রায় ৫৪ হাজার ভোটে তাঁকে পরাজিত করেন। ২০১৪ সালের ‘একতরফা’ নির্বাচনে ইসহাক হোসেন তালুকদার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাংসদ হন। তিনি ওই বছরের ৬ অক্টোবর মারা যান। উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গাজী ম ম আমজাদ হোসেন প্রথমবারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হন।
এবারের নির্বাচনে সাংসদ গাজী ম ম আমজাদ হোসেনসহ ২২ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তবে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয় ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক মো. আবদুল আজিজ। তাঁকে নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা মাঠে নেমেছেন। প্রতিদিনই সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত গণসংযোগ, উঠান বৈঠক আর কর্মী সমাবেশ করছেন।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের ১০ জন নেতা-কর্মী বলেন, ‘দল থেকে যাঁকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তিনি স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ। দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে আমরা মাঠে নেমেছি।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল আজিজ বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ভোটের প্রচারণায় অংশ নিচ্ছি। মানুষের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। যেখানেই যাচ্ছি ভোটারসহ সাধারণ মানুষের ব্যাপক সমর্থন পাচ্ছি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে যে বাংলাদেশ চলছে তাতে রায়গঞ্জ ও তাড়াশের মানুষ অবশ্যই শামিল হবেন। উন্নয়নের ধারাকে বজায় রাখতে আবারও নৌকায় ভোট প্রার্থনা করছি।’
বিএনপি প্রার্থী আবদুল মান্নান তালুকদার বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বিধি লঙ্ঘন করে চলেছেন। কিন্তু প্রশাসন নীরব ভূমিকায় আছেন। প্রশাসন যদি ভোটের মাঠ সবার জন্য সমান করতে পারে তবে রায়গঞ্জ-তাড়াশের মানুষ আরেকবার ভোটবিপ্লব ঘটিয়ে দেবে। ভোটের মাঠে আমাদের নেতা-কর্মীরা সব সময় হামলা-মামলার শিকার হচ্ছেন। প্রতিকারও পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও নির্বাচনী মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকব। বিগত সময়ের মতো আর আওয়ামী লীগকে ফাঁকা মাঠে গোল করতে দেওয়া হবে না। আশা করি, ৩০ ডিসেম্বর এ আসনের ভোটাররা বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর চালানো অত্যাচার ও নির্যাতনের জবাব ব্যালটের মাধ্যমে দেবেন।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির তিনজন নেতা বলেন, মানুষ যদি ভোট দেওয়ার সুযোগ পায় তবে ধানের শীষই বিজয়ী হবে।
রায়গঞ্জ উপজেলার একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়ন ও তাড়াশ উপজেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন নিয়ে আসনটি গঠিত। মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৫২৯ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার ১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭৯ জন এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৫০ জন।
হলফনামা সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল আজিজ পেশায় শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি স্নাতকোত্তর পাস। বার্ষিক আয় ১৮ লাখ ৪৭ হাজার ৫১৩ টাকা। ব্যাংকে তাঁর জমা রয়েছে ৩৪ লাখ টাকা এবং নগদ আছে ১৫ লাখ টাকা।
বিএনপি প্রার্থী আবদুল মান্নান তালুকদার এসএসসি পাস। ব্যবসায়ী এ প্রার্থীর বার্ষিক আয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। তাঁর নগদ রয়েছে ১৫ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে জমা আছে ৩ লাখ ১ হাজার টাকা।
মন্তব্য
মন্তব্য করুন প্রথমআলো.কম এ
মন্তব্য নেই