বাগেরহাটে এক আসনেই আ.লীগের ১৪৬ কমিটি

শিশির মোড়ল, বাগেরহাট থেকে ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

শেখ সারহান নাসের ও এম এ সালাম

• বাগেরহাট-২ আসন
• ভোটকেন্দ্র ১১৯ টি
• চাপ–আতঙ্কে মাঠেই নামতে পারছেন না বিএনপির নেতা-কর্মীরা

বাগেরহাট–২ আসনে ভোটকেন্দ্র ১১৯টি। এসব কেন্দ্রে নির্বাচন পরিচালনার জন্য আওয়ামী লীগ কমিটি করেছে ১৪৬টি। কেন্দ্রভিত্তিক এসব কমিটি দলের প্রার্থী শেখ সারহান নাসেরের (তন্ময়) পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছে। ঠিক উল্টো চিত্র বিএনপিতে। ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করা দূরের কথা, চাপ–আতঙ্কে মাঠেই নামতে পারছেন না দলটির নেতা–কর্মীরা।

বাগেরহাট সদর ও কচুয়া উপজেলা নিয়ে এই আসন। এখানে নৌকার নবীন প্রার্থী শেখ সারহান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই এবং বাগেরহাট-১ আসনের বর্তমান সাংসদ শেখ হেলাল উদ্দিনের ছেলে। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী দলের বাগেরহাট জেলা কমিটির সভাপতি এম এ সালাম। তিনি এই আসনের সাবেক সাংসদ এম এ এইচ সেলিমের ভাই। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন সালাম। এই আসনে ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন মোট ৭ প্রার্থী।

বাগেরহাট–২ আসনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান দলের জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুজ্জামান। তিনি জানান, ১১৯টি ভোটকেন্দ্রের জন্য ১২০টি কমিটির পাশাপাশি আরও ২৬টি কমিটি নির্বাচনে কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে মিডিয়া কমিটি, আপ্যায়ন কমিটি, গণসংযোগ কমিটি, প্রোগ্রাম মনিটরিং কমিটি, চিকিৎসা কমিটি, ইউনিয়ন–উপজেলা নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ইত্যাদি।

কেন্দ্রভিত্তিক আওয়ামী লীগের এসব কমিটি নিয়ে ভয়ে আছে বিএনপি। তাদের ধারণা, এসব কমিটি বিএনপির সমর্থক ভোটারদের কেন্দ্রে আসতে বাধা দেবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির প্রার্থী এম এ সালাম বললেন, ‘এখন আমার পাড়ায়, মহল্লায়, রাস্তায় থাকার কথা। জনসভা, পথসভা, গণসংযোগ করার কথা। কিন্তু করতে পারছি না।’

বিএনপির এই প্রার্থীর অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। কর্মী–সমর্থকদের কেউ ভয়ে তাঁর পোস্টার লাগাতে চাইছেন না। তাঁর অভিযোগ, বিএনপির সমর্থক অনেক ভোটারকে নির্বাচনের সময় এলাকায় না থাকতে বলেছেন প্রতিপক্ষের লোকজন। মামলা আর পুলিশের হয়রানি তো রয়েছেই।

এসব অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির শেখ কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণ ভোটারদের ব্যাপারে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে অতীতে বাগেরহাটে যারা সহিংসতা ছড়িয়েছিল, তাদের ওপর আমরা নজর রাখব।’ তিনি বলেন, গত ১০ বছরে এলাকায় বিএনপির সাংগঠনিক কোনো তৎপরত নেই। সভা–সমাবেশ, সম্মেলন করেনি। এসব করতে আওয়ামী লীগ বাধাও দেয়নি। বিএনপি অগোছালো। আওয়ামী লীগ প্রভাব খাটাচ্ছে না।

যদিও কর্মী-সমর্থক ও এজেন্টদের মারধর, ভয়ভীতি, হুমকি প্রদর্শনসহ আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে গতকাল শনিবার পর্যন্ত ১৫টি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী।

এ বিষয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা তপন কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘প্রতিটি অভিযোগ আমরা ক্ষতিয়ে দেখছি। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটরা এসব বিষয়ে তৎপর আছেন।’

বিএনপির নেতারা জানান, সাধারণত ডেকোরেটর দিয়ে এখন নির্বাচনী ক্যাম্প সাজানো হয়। তবে তাঁদের নির্বাচনী ক্যাম্প সাজাতে রাজি হতে চাইছেন না ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো। বিএনপির নেতাদের এই বক্তব্যের সত্যতা কতটুকু, তা জানতে চাইলে মাইক ভাড়া দেওয়া একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন, বিএনপির প্রচারণার জন্য মাইক দিতে কেউ তাঁদের নিষেধ করেননি। তবে বিএনপিকে মাইক ভাড়া দিয়ে কোনো ঝামেলায় পড়তে চান না কেউ।

আওয়ামী লীগের সভা–সমাবেশ থেকে বিরোধী পক্ষের সমর্থক ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হচ্ছে। একটি পথসভায় নিজের বক্তব্যের ভিডিও ব্যক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট করেছেন পৌর আওয়ামী লীগের নেতা খান তানভীর হোসেন। তিনি বলছেন, ‘...যাঁদের নৌকার প্রতি অ্যালার্জি আছে। তাঁরা সেন্টারে (ভোটকেন্দ্র) যাবেন না।...আপনারা কারা আমরা চিনি, নেতা–কর্মীরা চিনে। আপনাদের খুঁজে বের করা আমাদের এমন কোনো কষ্টের কাজ হবে না...।’

বাগেরহাট–২ আসনজুড়ে শুধু নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন। মোড়ে মোড়ে নির্বাচনী ক্যাম্পও শুধু আওয়ামী লীগেরই। অন্যদিকে কোথাও নেই বিএনপির প্রার্থী এম এ সালামের পোস্টার, ব্যানার বা মাইকে প্রচারণা। বাগেরহাট সদরের গোটাপাড়ায় ধানের শীষের প্রার্থীর গ্রামের বাড়ির সামনের রাস্তায় গত বুধবার গিয়ে দেখা যায়, এম এ সালামের কুশপুত্তলিকা। কে বা কারা দুই–তিন দিন আগে এটি বানিয়ে সড়কের প্রবেশমুখে বটগাছে ঝুলিয়ে গিয়েছে।

বাগেরহাটের হজরত খানজাহান (রহ.) মাজারের দিঘির উত্তর পাড়ে মা–মেয়ের ছোট চায়ের দোকান। বুধবার দুপুরে ওই দোকানে কোনো ভিড় ছিল না। মা–মেয়ে দুজনই নির্বাচন নিয়ে কথা বললেন। মা বললেন, ‘দশজনে ভোট দিলে আমিও দেব।’ কেউ ভোট চাইতে এসেছিল? উত্তরে দোকানি বললেন, ‘শুনতিছে একদলই শুধু ভোট চাইতেছে। অন্য দল নাকি মিছিল–মিটিং করতেছে না।’

মন্তব্য

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

    "কর্মী–সমর্থকদের কেউ ভয়ে তাঁর পোস্টার লাগাতে চাইছেন না। তাঁর অভিযোগ, বিএনপির সমর্থক অনেক ভোটারকে নির্বাচনের সময় এলাকায় না থাকতে বলেছেন প্রতিপক্ষের লোকজন"- শুধু বাগেরহাট নয়, আরও অনেক জায়গায় এটা কমন ঘটনা। নির্বাচন কমিশন কি গালে হাত দিয়ে বসে থাকার জন্য করা হয়েছিল। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোথায়। কেনই বা নৌকা ছাড়া আর কোন প্রার্থীর প্রচারণা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নির্বাচন কি শুধু আওয়ামী লীগ করছে অন্য কেউ করছে না? আর বেশী বলা ঠিক হবে না। আমাদের দেশেতো আবার বাক-স্বাধীনতা পৃথীবির সবচেয়ে বেশী তাই না!

  • image

    MMKhan

    ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

    বাগেরহাট-২ আসন যেন পুরো বাংলাদেশেরই এক রূঢ় অথচ বাস্তব চিত্র! অথচ, দেশের সাংস্কৃতিক জগতের কিছু বিবেকহীন আবর্জনা এই আওয়ামীলীগের প্রার্থীকেই দাঁত কেলিয়ে, হাত কচলিয়ে সমর্থন দেওয়ার জন্য বাগেরহাটে গিয়ে লাইন ধরে দাঁড়ায় আর অর্থহীন শব্দদূষণে পরিবেশ নষ্ট করে!!!

  • image

    hasan

    ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

    বাবা নৌকার প্রার্থী নিজেও নৌকার প্রার্থী বোনের জামাই ধানের শীষের প্রার্থী

  • image

    S Hossain

    ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

    শেখ সারহান নাসের (তন্ময়) আওয়ামীলীগ তথা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি

    • image

      নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

      ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮

      He couldn't even give a proper speech

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

    "নামতে পারছেনা" না বলে বলুন নামছেনা।বিএনপির মনের বাঘ দূর করবে কে?

  • image

    Md Shakil

    ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

    মুক্তির জন্য -ধানের শীষে ভোট দিন ।

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

    সবাইকে সমান সুযোগ না দিয়ে ভাল রাজনীতিবিদ সাজা আসলে ভণ্ডামি ছাড়া কিছুই না ।

  • image

    গোপাল ঘোষ

    ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

    এই তাহলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড?

  • image

    Probal

    ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

    মনোনয়ন পত্র দাখিলের সময়ও বিএনপির কর্মিবাহিনি ছিল উজ্জেবিত। নির্বাচনের মাঠে নেমে তারা হতাস হয়ে দেখল - বাংলাদেশের জনগন তাদের ২০০১-২০০৫ সালের অপোশাসনের কথা এখনো ভুলে নাই, ভুলে নাই তাদের জঙ্গি প্রেম, রাজাকার প্রেম, হাওয়া ভবন আর গ্রেনেড হামলা কথা। আর জনগনও এখন অনেক বেশী সচেতন - বিএনপির কর্মিদের আগেকার মিথ্যা কথার ফুলঝুড়িও আর জনগন বিশ্বাস করছে না। সব দেখে, বিএনপির কর্মিরা হতাস আর মনোবল হারিয়ে এখন নির্বাচনের মাঠ থেকে অনেক অনেক দুরে অবস্থান করছে। শত চেষ্টা করেও তাদের নির্বাচনের মাঠে নামাতে পারছেনা বিএনপির প্রার্থিরা।

    • image

      নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

      ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

      আচ্ছা প্রবাল সাহেব, সবই মানলাম কিন্তু এই যে নীচের মন্তব্য এটা কিসের লক্ষণ বলতে পারেন ?? এটা কি দেওলিয়াত্বের চরম প্রকাশ নয় ?? “”একটি পথসভায় নিজের বক্তব্যের ভিডিও ব্যক্তিগত ফেসবুকে পোস্ট করেছেন পৌর আওয়ামী লীগের নেতা খান তানভীর হোসেন। তিনি বলছেন, ‘...যাঁদের নৌকার প্রতি অ্যালার্জি আছে। তাঁরা সেন্টারে (ভোটকেন্দ্র) যাবেন না।...আপনারা কারা আমরা চিনি, নেতা–কর্মীরা চিনে। আপনাদের খুঁজে বের করা আমাদের এমন কোনো কষ্টের কাজ হবে না...।’””

    • image

      নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

      ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

      আপনারা আওয়ামী লীগের টেকেন ফর গ্রান্টেড (অবধারিত) বাহিনীর সদস্য। তাই হাজার হাজার মামলা আর লক্ষ লক্ষ গ্রেফতারও আপনাদের চোখে পড়বেনা। কারণ আপনারা টিনের চশমা পরে আছেন।

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

    বাগেরহাট আওয়ামী লীগের কি এতই দৈন অবস্হা যে একজন “বহিরাগত” কে এনে নৌকা প্রতিক দিতে হবে? সুষ্ঠ নির্বাচন হলে বাবা ও ছেলে দুই “বহিরাগত”র ই জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। তোষামদির সিমানা পেরিয়ে গেছে। জয় বাংলা

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

    আওয়ামী লীগের প্রার্থীর তো প্রতিদ্বন্দ্বীই দেখছি না। তাহলে এত এত তারকারা গিয়ে কার জন্য ভোট চাইলেন? নাকি শুধুই জনপ্রিয়তা প্রদর্শন!

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮

    বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যগণ যেসব জায়গায় প্রার্থী হয়েছেন, সেসব জায়গায় কি বিরোধীদের মাঠে থাকার অধিকার আছে? অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে বিরোধীদের প্রার্থী হওয়াটাই দোষের হয়েছে।

সব মন্তব্য