পিরোজপুরের তিনটি আসনে গ্রেপ্তার আতঙ্কে মাঠছাড়া বিএনপি। গত শনি ও রোববার রাতে পুলিশের অভিযানের পর দলের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী আত্মগোপনে চলে গেছেন। গত দুই দিনে বিএনপির অন্তত ১৪ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পিরোজপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। তাঁদের নেতা-কর্মীরা গ্রেপ্তার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অন্তত ১৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাঁদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে আর আওয়ামী লীগ ও শরিক দলের প্রার্থীরা ফাঁকা মাঠে প্রচার–প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
পিরোজপুর-১ (পিরোজপুর সদর-নাজিরপুর-নেছারাবাদ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ আসনের বর্তমান সাংসদ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল এবার দলের মনোনয়ন পাননি। শ ম রেজাউল করিম প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচার–প্রচারণা চালাচ্ছেন।
বিএনপির প্রার্থী মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী মাঠে নেই। শামীম সাঈদীর পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচার–প্রচারণা চালানো হচ্ছে না। সম্প্রতি শামীম সাঈদী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভোটারদের কাছে ভোট চেয়েছেন।
শামীম সাঈদী অভিযোগ করেন, তাঁর সমর্থকদের পুলিশ হয়রানি করছে। ভয়ে নেতা-কর্মীরা প্রচারণা চালাতে পারছেন না। তিনি নিজেও নিরাপত্তাহীনতার কারণে মাঠে নেই।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ হাকিম হাওলাদার বলেন, ‘শামীম সাঈদীর লোকজনকে কোনো হয়রানি করা হচ্ছে না। তাঁরা কী কারণে মাঠে নামছেন না, তা বুঝতে পারছি না।’
পিরোজপুর-২ আসনের ছয়বারের সাংসদ জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান ও পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। মহাজোটের ‘হেভিওয়েট’ এই প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দল বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজুর রহমান ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। মোস্তাফিজুর রহমানের পক্ষে নেতা-কর্মীরা কোনো প্রচারণা চালাতে পারছেন না। ইন্দুরকানি উপজেলায় তাঁর প্রচারণার মাইক ভাঙচুর করা হয়েছে। তিনি মাঠে নেমে প্রচার–প্রচারণা চালাতে পারছেন না।
উপজেলা জাতীয় পার্টির (জেপি) আহ্বায়ক মনিরুল হক জোমাদ্দার বলেন, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর কোনো লোকজন বা কর্মী ধানের শীষের লোকজনকে হয়রানি করছেন না। তিনি যদি প্রচার–প্রচারণা না চালাতে পারেন, তাহলে তাঁদের (জেপি) কাছে এসে বলুক। তাঁরা তাঁদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে দিয়ে দেবেন। যাতে তিনি নির্বিঘ্নে প্রচার চালাতে পারেন।
পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজী। বিএনপির প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন দুলাল। প্রতীক বরাদ্দের পর দুই প্রার্থী প্রচার–প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। তবে কয়েক দিন ধরে পুলিশের হয়রানির কারণে বিএনপির নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।
এদিকে, সংসদ নির্বাচন বানচালের চেষ্টা ও নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে উপজেলা বিএনপির ১০০ নেতা–কর্মীর নামে মামলা করা হয়েছে। গত সোমবার মঠবাড়িয়া থানার উপপরিদর্শক আবদুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ মামলায় রোববার রাতে উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. খলিলুর রহমান ও আ ম মাহবুবুল ইসলাম আকন, মঠবাড়িয়া পৌরসভার কাউন্সিলর বিএনপি নেতা সরোয়ার হোসেন, পৌর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মল্লিক, বড়মাছুয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মো. রফিকুল ইসলামসহ দলের ৯ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এজাহারে বলা হয়, রোববার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা নাশকতার পরিকল্পনা করেন । তাঁরা মঠবাড়িয়া-পাথরঘাটা সড়কের সেনের টিকিকাটা এলাকার সাত্তার দফাদারের বাড়ির সামনের সড়ক কেটে যানবাহন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালান। এ ঘটনায় ৪০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬০ জনকে আসামি করা হয়।
তবে টিকিকাটা গ্রামের তিন ব্যক্তি বলেন, রাত দুইটা পর্যন্ত তাঁরা ওই এলাকায় ছিলেন। এতগুলো মানুষ এখানে এলে তাঁদের চোখে পড়ত। এ ধরনের কিছু চোখে পড়েনি।
খলিলুর রহমানের স্বজনেরা বলেন, রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে তাঁকে উপজেলার আমড়াগাছিয়া বাজার এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। অথচ মামলায় দেখানো হয়েছে সেনের টিকিকাটা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দলের আরেক সহসভাপতি মাহাবুবুল ইসলাম আকনকে রাত ১০টায় উপজেলা সদরের বালুর মাঠ থেকে আটক করা হয়।
বিএনপির প্রার্থী রুহুল আমিন অভিযোগ করেন, নির্বাচনের মাঠ ফাঁকা করার জন্য বিএনপির নেতা-কর্মীদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে।
জনসভায় আওয়ামী লীগের নেতারা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে গিয়ে প্রকাশ্যে ভোট দেওয়ার জন্য বলছেন। তবে তাঁরা কাউকে ফাঁকা মাঠে গোল দিতে দেবেন না।
মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক মাতুব্বর বলেন, ‘আমরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের কোনো রকমের ভয়ভীতি বা হামলা–মামলা দিচ্ছি না। এক জনসভায় বলা হয়েছিল, আপনারা যদি লাঙ্গলে ভোট দেন তবে গোপনে নয় প্রকাশ্যে দেবেন।’
পিরোজপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাম কবির বলেন, বিভিন্ন মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কাউকে হয়রানি বা গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
মন্তব্য
মন্তব্য করুন প্রথমআলো.কম এ
Charu Hossain
২৬ ডিসেম্বর, ২০১৮
বিএনপির তো মেরুদণ্ডহীন একটা দল। যারা মাঠেই নামেনা তাদের কি গ্রেপ্তার করবে।শুধুই অভিযোগ। বিএনপি এখন অভিযোগ দল।