পার্বত্য চুক্তির স্বপক্ষের দল জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে বিপক্ষের ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নির্বাচনী ঐক্য চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে। দীর্ঘ বৈরিতা ঝেড়ে দুই প্রধান আঞ্চলিক দলের কাছাকাছি আসাটা রাঙামাটি আসনে নতুন সমীকরণ তৈরি করেছে।
মূলত ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস রয়েছে পার্বত্য এই জেলায়। ত্রিমুখী লড়াইয়ে তিনটি শব্দ খুব বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। এগুলো হলো উন্নয়ন, শান্তি এবং জনগণ। আওয়ামী লীগ প্রার্থী দীপংকর তালুকদার উন্নয়নের জয়গান করে ভোট চাচ্ছেন। আর বর্তমান সাংসদ জেএসএসের ঊষাতন তালুকদার জোর দিচ্ছেন পাহাড়ে স্থায়ী শান্তির বাতাবরণ তৈরিতে। বিএনপি প্রার্থী মনি স্বপন দেওয়ানের ভরসা জনগণ।
১০ উপজেলা নিয়ে গঠিত রাঙামাটি আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ১৮ হাজার ২১৭ জন। এর মধ্যে সদর উপজেলায় প্রায় ৯০ হাজার ভোটার রয়েছে। ভোটকেন্দ্র রয়েছে ২০৩টি। সদরে আওয়ামী লীগের প্রভাব বেশি থাকলেও দুর্গম উপজেলাগুলোতে জেএসএস ও ইউপিডিএফের আধিপত্য। আর বিএনপির চোখ সেটেলার ভোটের দিকে।
তবে এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জেএসএস ও বিএনপির পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও শঙ্কা প্রকাশ করছে। প্রতিপক্ষ দলগুলো বলেছে ‘শঙ্কা প্রকাশ’ সরকারি দলের কৌশল।
সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিচ্ছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশীদ। প্রথম আলোকে বলেন, ‘শঙ্কার কোনো কারণ নেই। নিরপেক্ষ, অবাধ এবং সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ রয়েছে। আমরা তা তৈরি করব। অবস্থা বুঝে সেনাবাহিনী প্রয়োজনে প্রতিটি কেন্দ্রে থাকবে।’
গত মঙ্গলবার সকালে ঊষাতন তালুকদারের সঙ্গে দেখা হয় আঞ্চলিক পরিষদের বিশ্রামাগারের সামনে। তিনি বাঘাইছড়ি থেকে প্রচারণা শেষে রাঙামাটিতে ফেরেন তখন। কাপ্তাইয়ে প্রচারণায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
ঊষাতন তালুকদার বলেন, পাহাড়ের স্থায়ী শান্তির জন্য মানুষ জেএসএসকে চায়। তবে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কিত। সরকারি দলের হয়ে একটি আঞ্চলিক দল ভোটারদের হুমকি–ধমকি দিচ্ছে।
জেএসএস (এমএন লারমা) এবং ইউপিডিএফ ভেঙে গঠিত ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক আনুষ্ঠানিকভাবে নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছে। আর ইউপিডিএফ দীর্ঘ দুই দশকের বৈরিতা ভুলে জেএসএস প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। ফলে ইউপিডিএফ অধ্যুষিত বাঘাইছড়ি, নানিয়ারচর ও কাউখালীতে নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালাচ্ছেন ঊষাতন। নানিয়ারচর, বগাছড়ি, ঘিলাছড়ি এলাকায় ঊষাতন তালুকদারের সিংহ প্রতীকের পোস্টার ঝুলতে দেখা গেছে। যেটা দশম সংসদ নির্বাচনেও সম্ভব হয়নি।
সিংহের প্রচারণার সময় বাঘাইছড়ির বাসিন্দা তরুণ বিকাশ চাকমাও বললেন, ‘পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি দরকার। যিনি এ নিয়ে কাজ করবেন তাঁকে ভোট দেব। চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এখনো শান্তি আসেনি।’
চুক্তির বিপক্ষের দলের সঙ্গে ঐক্যের বিষয়ে ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘ইউপিডিএফ দীর্ঘদিন ধরে চুক্তির স্বপক্ষে কথা বলে আসছে। তারা আমাদের বিষয়ে বর্তমানে চুপ রয়েছে। তাদের এলাকায় আমরা গিয়েছি।’
নৌকার মাঝি দীপংকর তালকুদার মঙ্গলবার সকালে কাপ্তাই হ্রদে স্পিডবোট ভাসিয়ে বিলাইছড়ি উপজেলায় প্রচারণায় যান। আগের দিন সোমবার সন্ধ্যায় তিনি শহরের কাঁঠালতলী এলাকায় এক পথসভায় বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে আওয়ামী লীগ সরকারই যত উন্নয়ন করেছে। ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নৌকায় ভোট চাই।’
তবে সরকারি দল হয়েও তারাও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছে। মঙ্গলবার সকালে রাঙামাটি সদরের দলীয় কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাতাব্বর বলেন, ‘৫৩টি কেন্দ্র নিয়ে আমরা শঙ্কিত। এসব কেন্দ্রে জেএসএস ঝামেলা করতে পারে।’
ইউপিডিএফের সঙ্গে ঐক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চুক্তির পক্ষের লোক যদি বিপক্ষের সঙ্গে হাত মেলায় তাহলে বলতে হয়, যার জন্য চুরি করলাম সে বলে চোর।’
বিএনপি প্রার্থী মনি স্বপন দেওয়ান ১২ বছর ধরে দলের সঙ্গে ছিলেন না। এলডিপি হয়ে তিনি আবার বিএনপির প্রার্থিতা পেয়েছেন। তবে তাঁর পেছনে দলের বিবদমান অংশগুলোও ঐক্যবদ্ধ। সভাপতি মো. শাহ আলম, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা দীপেন দেওয়ান একসঙ্গে প্রচারণায় নেমেছেন। মঙ্গলবার সকালে মনি স্বপন দেওয়ান সদরের রাজবন বিহারে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এ সময় কাঁঠালতলীর দলীয় কার্যালয়ে বিএনপির নেতা–কর্মীরা অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দীপন তালুকদার বলেন, ‘জনগণ ভোট দিতে পারলে ধানের শীষের বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না।
মন্তব্য
মন্তব্য করুন প্রথমআলো.কম এ
Shakib Khan
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
জেএসএস-ইউপিডিএফ ‘ঐক্যে’। পাহাড়ে নতুন করে অশান্তির ছক কষবেন নাত আবার???
Odong Chakma
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
ভাইজান, আগে ভালো করে ভোট দেন। শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েই তো নির্বাচন করছেন। এখন আপনার দায়িত্ব হলো ভোট দিয়ে তাকে শান্তি প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব অর্পন করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
সাকিব ভাই এত বছর ধরে সরকার যে মুলা ঝুলিয়ে পাহাড়ীদের সাথে প্রতারণা করছে তখন কোখায় ছিলেন?