‘
জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা। শেখ হাসিনার সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন।’ এ ধরনের গানে গানে প্রচারে মুখর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের শহর, পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারের শেষ সময় আগামীকাল সকাল আটটা। শেষ সময়ে গতকাল বুধবার সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও এর জোটের প্রার্থীরা প্রচারে সরগরম ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে তাঁর ব্যক্তিগত বাসভবন ধানমন্ডির সুধা সদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কুষ্টিয়া, নওগাঁ ও চাঁদপুরের নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দেন। তিনি এই তিন জেলার আওয়ামী লীগ এবং মহাজোটের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে তাঁদের জন্য ভোট চান। এবার পোস্টার, প্রচারপত্র, ব্যানার ছাড়াও বিভিন্ন রকম গানে গানে স্লোগান তৈরি ও ডিজিটাল মাধ্যমের নানা উপকরণের মধ্য দিয়ে প্রচারে অনেক নতুনত্ব এনেছে আওয়ামী লীগ। প্রচার শুরুর পর থেকেই সর্বত্র বাজছে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে রেকর্ড করা গানগুলো। এর মধ্যে কিছু প্রচার-স্লোগান তৈরি করা হয়েছে জাতীয় বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে, আবার কিছু কিছু প্রার্থীকে কেন্দ্র করে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সব ধরনের প্রচারেই প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির চেয়ে এগিয়ে আওয়ামী লীগ।
গতকাল রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, তেজগাঁও, পুরান ঢাকা, উত্তরা, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আওয়ামী লীগের প্রচুর নির্বাচনী কার্যালয় দেখা গেছে। এসব কার্যালয়ে দিনভরই মাইকে বা সাউন্ড বক্সে নৌকায় ভোট চেয়ে ও সরকারের উন্নয়নের প্রচারসংবলিত রেকর্ড করা গান বাজতে দেখা যায়। সারা দিন মাঠে ছিলেন রাজধানীর ১৫টি আসনের আওয়ামী লীগ ও এর জোটের সব প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরুর প্রথম দিন থেকেই মাঠে এগিয়ে থাকার পরিকল্পনা ছিল আওয়ামী লীগের। দলীয় মনোনয়নের চিঠি পেয়েই সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় চলে যান। শুরু থেকেই প্রচারে প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।
বিএনপিসহ বিরোধী দলের প্রার্থী ও সমর্থকেরা হামলা বা বাধার শিকার হয়েছেন অনেক স্থানে। তবে কিছু কিছু স্থানে সম্প্রীতিও দেখা গেছে। গাজীপুরের কাপাসিয়ায় আওয়ামী লীগের সিমিন হোসেন রিমি ও বিএনপির প্রার্থী শাহ রিয়াজুল হান্নান বাধাহীনভাবে প্রচার চালাচ্ছেন। গতকালও তা অব্যাহত ছিল। একইভাবে সম্প্রীতির মধ্যে প্রচার চলতে দেখা গেছে, দিনাজপুর-২ আসনে। সেখানে আওয়ামী লীগের খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর পাশাপাশি বিএনপির প্রার্থী সাইদ রিয়াজ চৌধুরীও নির্বিঘ্নে প্রচার চালিয়েছেন।
চট্টগ্রাম-৯ আসনে আওয়ামী লীগের মহিবুল হাসান চৌধুরী গতকাল প্রচারের পাশাপাশি সনাতনী নাগরিক সমাবেশ ও টেরীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেন কারাগারে থাকলেও তাঁর সমর্থকেরা মাঠে আছেন।
গতকাল ভোলা–২ আসনের দলীয় প্রার্থী আলী আজমের পথসভায় অংশ নিয়ে তাঁর জন্য ভোট চান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তোফায়েল ভোলা–১ আসনের প্রার্থী। গতকাল খুলনা–৪ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুস সালাম মুর্শেদী দিঘলিয়া উপজেলায় নির্বাচনী জনসভা করেছেন। রংপুর-৬ আসনে চষে বেড়াচ্ছেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।
গতকাল ফরিদপুরে শহরে ব্যবসায়ী সমাবেশে নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়েছেন ফরিদপুর–৩ আসনের প্রার্থী স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
আওয়ামী লীগের প্রচার উপকমিটির সূত্র বলছে, প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে তৈরি প্রচারসামগ্রী পাঠানো হয়। এর মধ্যে ছিল তিনটি সিডি। একটি সিডিতে রেকর্ড করা কিছু গান আছে। ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা’ গানটিও সিডিতে রয়েছে। এ ছাড়া দলের সাংসদ ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমের ভোট প্রার্থনা করে গাওয়া গানও আছে। এসব গান এখন সারা দেশের প্রচার মাইক ও প্রচার ক্যাম্পে অনবরত বাজছে। আরেকটি সিডিতে আওয়ামী লীগের ১০ বছরের অর্জনের ভিডিও রয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে-পরে বিএনপি-জামায়াতের ডাকা হরতাল-অবরোধের সময় করা জ্বালাও-পোড়াওয়ের ওপর ভিত্তি করে করা হয়েছে আরেকটি সিডি। কেন্দ্রীয় প্রচার উপকমিটি তিন ধরনের সিডির ৩ হাজার করে কপি সারা দেশে পাঠিয়েছে। পোস্টার ও প্রচারপত্রের নকশাও কেন্দ্রীয়ভাবে করে দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার উপকমিটির নেতারা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের উপপ্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগ দলগতভাবে প্রচারে কোনো ঘাটতি রাখছে না। পাশাপাশি ব্যবসায়ী, তারকা, সাংবাদিকসহ পেশাজীবীরাও নিজেদের মতো করে প্রচার করছেন। তাঁরা শেখ হাসিনা ও নৌকার ধারাবাহিকতা দরকার উপলব্ধি করে মানুষকেও তা বোঝানোর চেষ্টা করছেন।
এর বাইরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, প্রার্থীদের অনেকেই নিজের পাঞ্জাবি, চাদর, মাফলার কিংবা পরিধেয় পোশাকে নৌকা প্রতীকের ছাপ লাগিয়ে ভোট চাইছেন। সমর্থকদেরও কাউকে কাউকে এই বেশে ভোট চাইতে দেখা যাচ্ছে। ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ধানমন্ডি কার্যালয়ের সামনে এসব সামগ্রীর পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কার্যালয়ের সামনে থেকে সাউন্ড বক্সসহ বেশ কিছু গানের যন্ত্রাংশ নিয়ে মিনি ট্রাক রাজধানীর বিভিন্ন আসনে ঘুরে বেড়ায়। প্রার্থীদের ছবিসংবলিত বড় বড় দুটি পোস্টার টাঙানো এতে। এই ট্রাকগুলো থেকে ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা’, ‘শেখ হাসিনার সালাম নিন, নৌকায় মার্কায় ভোট দিন’ গান বাজানো হয়। আসনে আসনে দলীয় প্রার্থীর নামে সালাম জানিয়েও ভোট চাওয়া হয়। ঢাকা ও সারা দেশে পথসভা ও মিছিলে কাঠ, কাগজ কিংবা ককশিটে তৈরি নৌকা বহন করতে দেখা যায়।
আওয়ামী লীগের প্রচারে এবার বেশ কিছু তারকা যুক্ত হয়েছেন। গতকাল ভোলা–৪ আসনের প্রার্থী উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের পক্ষে চরফ্যাশনে প্রচারে অংশ নেন অভিনয়শিল্পী রিয়াজ, ফেরদৌস, পপি, অপু বিশ্বাস ও ইমন।
এর আগে ১২ ডিসেম্বর চলচ্চিত্র তারকা রিয়াজ ও ফেরদৌস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জ সফরে সঙ্গী হন এবং জনসভায় নৌকা প্রতীকে ভোট চান। পরদিন ১৩ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে প্রচারাভিযান শুরু করেন শিল্পী, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়, বুদ্ধিজীবীসহ অনেকেই। এরপর অভিনয়শিল্পীরা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারে অংশ নেন। এতে আরও আছেন শমী কায়সার, অরুনা বিশ্বাস, রোকেয়া প্রাচী, পূর্ণিমা, মাহফুজ, তারিন, বিজরী বরকতউল্লাহ, সুইটি, মীর সাব্বির, শাকিল খানসহ অনেকে।
প্রার্থীর পাশাপাশি তাঁদের স্ত্রী-সন্তানেরাও নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। ঢাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিদ্যুৎ-পানি সমস্যা সমাধানের প্রচার করছেন। ঢাকাসহ মহানগরের বাইরের প্রার্থীদের প্রচারে গ্রামে শহরের সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি গুরুত্ব পাচ্ছে। এ ছাড়া ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া এবং প্রতি পরিবারের অন্তত একজনের চাকরির নিশ্চয়তা, রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও থাকছে।
এই বিষয়ে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের অন্যতম নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি এ এস এম মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, প্রচারেই প্রসার বলে একটা কথা আছে। ভোটে এর আসল রূপ দেখা যায়। রাজনৈতিক দলগুলো আকর্ষণীয়ভাবে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের প্রচারে ছন্দ আছে, তারা তরুণদের আকৃষ্ট করতে পেরেছে বলে মনে হয়। বিএনপিও প্রচার চালাচ্ছে। তবে তাদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি লক্ষ করা যাচ্ছে। তাদের প্রচারে বাধার অভিযোগ থাকলেও বিএনপি প্রচারে সক্ষমতাও দেখাতে পারেনি।
মন্তব্য
মন্তব্য করুন প্রথমআলো.কম এ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
উন্নয়নে তো দেশ ভাসছে! তাহলে এত প্রচার লাগছে কেন? যেখানে অন্যদের সুযোগই দেয়া হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
আপনাদের জামাত-বিএনপির সমর্থক না ৯০% এর বেশি তাহলে বিএনপির প্রচারের দরকার কি? তারা তো প্রচার না করেই ক্ষমতায় আসবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
প্রচারেই প্রসার বলে একটা কথা আছে। ভোটে এর আসল রূপ দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
উন্নয়নের নমুনা: ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১৪ কোটি মানুষের হাতে মোবাইল ফোন না কি আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে! ভিক্ষুকরাও না কি এখন মোবাইল ফোনে অর্ডার দেয়! :(((
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
পোস্টার ও প্রচারপত্রের নকশাও কেন্দ্রীয়ভাবে করে দেওয়া হয়েছে বলে প্রচার উপকমিটির নেতারা জানিয়েছেন। কক্সবাজার ৪ এর জন্যও কি নকশা করে দেওয়া হয়েছে? তাহলে সহধর্মীনি, বৌ, আম্মু, কন্যা এগুলো ও কি কেন্দ্র থেকে বলে দিয়েছে???
ফাহীম
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
ভাগ্যিস শীতের দিন, দরজা জানালা বন্ধ, খুললেই মাথা ধরে যায়
Deepak Eojbalia
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
Nation woke up. Joy Bangla.
Deepak Eojbalia
২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮
The scene of lively bangladesh.