এবার সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু প্রার্থী

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

দেশে সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা ক্রমাগতভাবে কমতে থাকলেও সংখ্যালঘু প্রার্থীর সংখ্যায় তার প্রভাব পড়েনি। বরং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু প্রার্থীর সংখ্যা বেড়ে ৭৯ হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৫ জন নারী এবং ২ জন প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি, আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, এবার যে শুধু সংখ্যালঘু প্রার্থীর সংখ্যা বেড়েছে তা নয়, এর আগে কোনো সংসদ নির্বাচনে এত বেশিসংখ্যক সংখ্যালঘু প্রার্থী ছিলেন না। তা ছাড়া প্রায় সব দলের ইশতেহারে সংখ্যালঘুদের সমস্যা ও দাবিদাওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক অঙ্গীকার করা হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে এককভাবে সবচেয়ে বেশি, ১৮ জন সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে সামগ্রিকভাবে সংখ্যালঘু প্রার্থী বেশি মনোনয়ন দিয়েছে বামপন্থী দলগুলো। যেমন সিপিবি মনোনয়ন দিয়েছে ১৭ জন। বাসদ ৯ জন। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ৭ জন। এ ছাড়া গণফোরাম ৩ জন, বিএনএফ ৩ জন, ন্যাপ ২ জন, গণতন্ত্রী পার্টি, জাসদ এবং আরও কয়েকটি ছোট দল ১ জন করে সংখ্যালঘু প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে।

অন্যদিকে, এবারের নির্বাচনে বিএনপি সংখ্যালঘু প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে ছয়জন। জাতীয় পার্টি দিয়েছে তিনজন। ইসলামী দল হিসেবে পরিচিত জাকের পার্টি একজন সংখ্যালঘু প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন দুইজন। এ ছাড়া, দুটি প্রধান জোটের শরিক হিসেবে এবং জোটভুক্ত হয়েও নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করছেন অন্যরা।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন পার্বত্য রাঙামাটি থেকে ঊষাতন তালুকদার এবং পার্বত্য খাগড়াছড়ি থেকে নুতন কুমার চাকমা। এর মধ্যে ঊষাতন তালুকদার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) প্রার্থী। জেএসএস নিবন্ধিত দল না হওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। আর নুতন কুমার চাকমা পার্বত্য চট্টগ্রামের আরেকটি অনিবন্ধিত আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (ইউপিডিএফ) প্রার্থী।

সংখ্যালঘু প্রার্থীদের মধ্যে পাঁচ দলের মনোনীত পাঁচজন নারী রয়েছেন। তাঁরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের জয়া সেনগুপ্ত (সুনামগঞ্জ-২)। সিপিবির জলি তালুকদার (নেত্রকোনা-৪)। বাসদের শম্পা বসু (ঢাকা-৮)। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জুঁই চাকমা (পার্বত্য রাঙামাটি) এবং পিডিপির রূপা রায় চৌধুরী (টাঙ্গাইল-৭)। এর মধ্যে জয়া সেনগুপ্ত আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী। তিনি দশম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। অন্য চারজন এবারই প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।

সংখ্যালঘু প্রার্থীদের মধ্যে ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রাম জেলায় ৭ জন করে মোট ২১ জন মনোনয়ন পেয়েছেন। তিন পার্বত্য জেলায় মনোনয়ন পেয়েছেন ১০ জন। অন্যান্যের মধ্যে হবিগঞ্জে ৪ জন, নেত্রকোনায় ৪ জন, সিলেটে ২ জন, মুন্সিগঞ্জে ২ জন, মৌলভীবাজারে ২ জন, যশোরে ২ জন, পিরোজপুরে ২ জন, গাইবান্ধায় ২ জন, নওগাঁয় ২ জন, ময়মনসিংহে ২ জন, টাঙ্গাইলে ২ জন, বগুড়ায় ২ জন এবং মাগুরায় ২ জন সংখ্যালঘু প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছেন।

এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জে একজন, গাজীপুরে একজন, ঝালকাঠিতে একজন, দিনাজপুরে একজন, ঠাকুরগাঁওয়ে একজন, কুড়িগ্রামে একজন, নোয়াখালীতে একজন, ফেনীতে একজন, বরিশালে একজন, বরগুনায় একজন, বাগেরহাটে একজন, মাদারীপুরে একজন, রংপুরে একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন, শরীয়তপুরে একজন, সাতক্ষীরায় একজন, সিরাজগঞ্জে একজন, সুনামগঞ্জে একজন সংখ্যালঘু প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছেন।

১৯৭০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাওয়া হিসাবে দেখা যায়, সংখ্যালঘু প্রার্থীরা বিভিন্ন নির্বাচনে ৮ থেকে ১৮টি জেলায় নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। তবে এবার দেশের ৩৭টি জেলার ৬৩টি আসনে প্রার্থী হয়েছেন তাঁরা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সংখ্যালঘু প্রার্থীরা ১৯৭০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে পার্বত্য চট্টগ্রাম, নেত্রকোনা, বরগুনা, খুলনা, ময়মনসিংহ, মাগুরা, দিনাজপুর, মুন্সিগঞ্জ, যশোর, ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, নাটোর, নড়াইল, যশোর, ফরিদপুর, সিলেট, টাঙ্গাইল, পিরোজপুর, রংপুর ও রাজশাহীর বিভিন্ন আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।

যেসব সংসদীয় আসনে সংখ্যালঘু ভোটারের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত বেশি, সেখান থেকেই রাজনৈতিক দলগুলো সংখ্যালঘু প্রার্থী মনোনয়ন দেয় কি না জানতে চাইলে রানা দাশগুপ্ত বলেন, এই ধারণাটি আংশিক সত্য। সংখ্যালঘু ভোটারও বেশি থাকেন, আবার প্রার্থীকে মনোনয়ন পাওয়ার যোগ্যও হয়ে উঠতে হয়।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, এবার আওয়ামী লীগ থেকে যে ১৮ জন সংখ্যালঘু প্রার্থী মনোনয়ন পেয়েছেন তার মধ্যে ২ জনের, ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ (বরগুনা-১) এবং পঙ্কজ দেবনাথের (বরিশাল-৪) নির্বাচনী এলাকায় সংখ্যালঘু ভোটার ১০ শতাংশের মতো। অন্যদের এলাকাগুলোতে সংখ্যালঘু ভোটার ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।

১৯৭০ সালের প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন থেকে ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত মোট ৫০ জন সংখ্যালঘু প্রার্থী ঘুরেফিরে ৯৬টি আসনে বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সর্বোচ্চ সাতবার (একবার উপনির্বাচনসহ) নির্বাচিত হয়েছেন। বীর বাহাদুর উ শৈ সিং পাঁচবার, প্রমোদ মানকিন পাঁচবার, সতীশ চন্দ্র রায় চারবার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনবার করে নির্বাচিত হয়েছেন সুনীল কুমার গুপ্ত, দীপংকর তালুকদার, ধীরেন্দ্র চন্দ্র দেবনাথ, ফণীভূষণ মজুমদার এবং বীরেন শিকদার। এ ছাড়া ২০ জন প্রার্থী দুইবার করে নির্বাচিত হয়েছেন।

ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু প্রার্থীরা পার্বত্য চট্টগ্রাম, বরিশাল, সিলেট/সুনামগঞ্জ, খুলনা, দিনাজপুর ও ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন আসন থেকে সবচেয়ে বেশিবার নির্বাচিত হয়েছেন।

 

মন্তব্য

  • image

    Ashish Ghosh

    ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

    এই নির্বাচন পরিবর্তনের জন্য। এই নির্বাচন ন্যায়বিচারের জন্য। তৃণমূল এটা বোঝে।

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

    Minorities should get reserved seat.

সব মন্তব্য