কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে তোরণ-আলোকসজ্জা

আসাদুজ্জামান, কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ থেকে ফিরে ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

নির্বাচনী প্রচারণায় তোরণ বা গেট বানানো একেবারেই নিষিদ্ধ। অথচ কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগের পাঁচজন প্রার্থীর নির্বাচনী এলাকায় বানানো হয়েছে তোরণ। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধি অনুযায়ী, প্রার্থী তাঁর নিজের ছবি, প্রতীক এবং দলীয় প্রধানের ছবি ছাড়া পোস্টারে আর কারও ছবি ব্যবহার করতে পারবেন না। পাশাপাশি সরকারি বা বেসরকারি কোনো স্থাপনার দেয়ালে নির্বাচনী পোস্টার সাঁটানো বা লিখনও নিষিদ্ধ। বিধি অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারে বিদ্যুতের সাহায্যে যে কোনো ধরনের আলোক সজ্জাও অগ্রহণযোগ্য। তবে এই পাঁচ প্রার্থীর নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র।

শামীম ওসমানের জন্য নৌকায় ভোট চেয়ে পোস্টার। ছবি: আসাদুজ্জামানআওয়ামী লীগের এই পাঁচ প্রার্থী হলেন ঢাকা-২ আসনের খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ঢাকা-৩ আসনের বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের শামীম ওসমান, মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি ও মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের মৃণাল কান্তি দাস।

শামীম ওসমানের পক্ষে ভোট চেয়ে পোস্টার ছবি: আসাদুজ্জামানঢাকার বিভাগীয় কমিশনার ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কে এম আলী আজম প্রথম আলোকে বলেন, সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা অনুযায়ী, নির্বাচনী প্রচারণায় তোরণ বা গেট বানানো যাবে না। প্রার্থী তার দলীয় প্রধানের ছবি ছাড়া আর কারও ছবি ব্যবহার করতে পারবেন না। ঢাকার কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনী এলাকায় এমন ঘটনা ঘটে থাকলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কে এম আলী আজম জানান, আজই (বৃহস্পতিবার) তিনি ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জের রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে বলবেন।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর ভোট চেয়ে কেরানীগঞ্জে ব্যানার। ছবিটি গত শনিবার তোলা।  ছবি: আসাদুজ্জামানসংসদ নির্বাচনে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা-২০০৮’ অনুযায়ী, প্রার্থী নিজে কিংবা তাঁর পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি এই বিধি লঙ্ঘন করলে এর শাস্তি অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড প্রযোজ্য।


কেরানীগঞ্জের নির্বাচনী এলাকায় তোরণ নির্মাণ করে চলছে নির্বাচনী প্রচারণা। ছবিটি গত শনিবার তোলা। ছবি: আসাদুজ্জামানখাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম
কেরানীগঞ্জ উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ এবং সাভার উপজেলার কিছু অংশ নিয়ে গঠিত ঢাকা-২ নির্বাচনী আসন। বর্তমান সাংসদ ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরুল ইসলামের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রার্থী ইরফান ইবনে আমান।

দেয়ালে পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ হলেও কেরানীগঞ্জে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের পোস্টার দেয়ালে লাগানো হয়েছে। ছবিটি গত শনিবার তোলা । ছবি: আসাদুজ্জামানগত শনিবার কেরানীগঞ্জের হজরতপুর, কলাতিয়া, তারানগর এবং রোহিতপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, কামরুল ইসলামের পোস্টার সাঁটানো হয়েছে মোড়ে মোড়ে, মহল্লায় মহল্লায়। উপজেলার বিভিন্ন সড়কে দেখা গেছে একাধিক তোরণ—যাতে সাঁটানো আছে কামরুল ইসলামের ডিজিটাল নির্বাচনী ব্যানার। তবে বিএনপির প্রার্থী ইরফানের প্রচারণা একেবারেই কম। বিচ্ছিন্ন কিছু জায়গায় তাঁর পোস্টারের দেখা মিলেছে। কেবল হজরতপুরে নিজের বাড়ির সামনের সড়কে চোখে পড়ে ইরফানের একাধিক পোস্টার— যেখানেও আছে কামরুল ইসলামের প্রচারণা।

দেয়াল লিখন নিষিদ্ধ হলেও সেটা করেই ভোট চাইছে কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ। ছবি: আসাদুজ্জামানগত শুক্রবার রাতে ঢাকা-দোহার সড়কে (রোহিতপুর ইউনিয়নের মধ্যে) দেখা গেল, কামরুল ইসলামের নির্বাচনী প্রচার ক্যাম্পে বিদ্যুতের সাহায্যে আলোক সজ্জা করা হয়েছে। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জে বাড়ির দেওয়ালে কামরুল ইসলামের নির্বাচনী পোস্টার দেখা গেছে।


কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ায় নির্মিত তোরণ। ছবি: আসাদুজ্জামানবিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ
কেরানীগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে ঢাকা-৩ আসন। এগুলো হলো, কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, আগানগর, তেঘরিয়া, কোন্ডা ও শুভাঢ্যা। এ আসনে নসরুল হামিদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।

গত শনিবার আগানগর, জিনজিরা এবং তেঘরিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, রাস্তায় রাস্তায় নসরুল হামিদ বিপুর পোস্টার। অবশ্য বিএনপির প্রার্থী গয়েশ্বরের পোস্টারও কদমতলী মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় দেখা গেছে। তবে কোনো নির্বাচনী ক্যাম্প দেখা যায়নি।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী নসরুল হামিদ বিপুর জন্য ভোট চেয়ে ডিজিটাল ব্যানার লাগানো হয়েছে। এই ব্যানারে নসরুলের ছবি ছাড়াও জিনজিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পাঁচ নেতার ছবি দেখা গেছে। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়ায় নির্মিত তোরণে দেখা গেছে নসরুল হামিদ বিপুর ছবি।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে তোরণ। ছবিটি মঙ্গলবার তোলা।  ছবি: আসাদুজ্জামানসাংসদ শামীম ওসমান
ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা নিয়ে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। এ আসনে বর্তমান সাংসদ আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা মুফতি মনির হোসেন কাসেমী।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে নির্বাচনী ক্যাম্পে আলোকসজ্জা। ছবি: আসাদুজ্জামানমঙ্গলবার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে দেখা গেল, রাস্তার দুই পাশে শামীম ওসমানের নির্বাচনী পোস্টার। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী মুফতি মনিরের পোস্টার চোখে পড়েনি।
চাষাঢ়া মোড়ে দেখা গেল তোরণ। তোরণে শামীম ওসমানের ডিজিটাল ব্যানার লাগানো। কেবল চাষাঢ়া মোড়ে নয়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের দুই পাশে একাধিক তোরণ বানানো হয়েছে। সেগুলোতে শামীম ওসমানের ভোট চেয়ে একাধিক ডিজিটাল ব্যানার টাঙানো হয়েছে। এসব ব্যানারে শামীম ওসমানের ছবি ছাড়াও একাধিক ব্যক্তির ছবি দেখা গেছে।

টঙ্গিবাড়ীতে সাগুফতা ইয়াসমিনের পক্ষে ভোট চেয়ে তোরণ তৈরি করা হয়েছে। গত সোমবার তোলা। ছবি: আসাদুজ্জামানসাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি
লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নিয়ে মুন্সিগঞ্জের-২ আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা।

দেয়ালে সাগুফতার নির্বাচনী পোস্টার। ছবি: আসাদুজ্জামানগত রোববার ও সোমবার লৌহজং ও টঙ্গিবাড়ীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, বাজারে বাজারে গ্রামে গ্রামে সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির নির্বাচনী পোস্টার। প্রায় বাজারে বানানো হয়েছে এমিলির নির্বাচনী ক্যাম্প। বিএনপির প্রার্থী সিনহার কোনো নির্বাচনী ক্যাম্প দেখা যায়নি। তবে তাঁর কিছু পোস্টার লৌহজংয়ের কলমা ইউনিয়ন এলাকার সড়কে দেখা গেছে।

নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা তোরণ নির্মাণ নিষিদ্ধ হলেও টঙ্গিবাড়ী এবং লৌহজং উপজেলায় একাধিক তোরণ দেখা গেছে। তোরণে টাঙানো হয়েছে সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলির ছবি। একাধিক নির্বাচনী ক্যাম্প আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।

মৃণালের পক্ষে ভোট চেয়ে তোরণ। গত মঙ্গলবার তোলা । ছবি: আসাদুজ্জামানমৃণাল কান্তি দাস
সদর উপজেলা এবং গজারিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মুন্সিগঞ্জ-৩ আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি নেতা আবদুল হাই।

নির্বাচনী পোস্টার হতে হবে সাদা কালো রঙের। অথচ নির্বাচনী ক্যাম্পে মৃণালের রঙিন ছবি। ছবি: আসাদুজ্জামানমঙ্গলবার মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, মৃণাল কান্তির নির্বাচনী প্রচার তুঙ্গে। মুন্সিগঞ্জের জেলা শহর থেকে গ্রামের সড়কগুলোয় মৃণাল কান্তির পোস্টার। মুক্তারপুরে নিজের বাড়ির সামনে বিএনপির আবদুল হাইয়ের পোস্টার দেখা গেছে। এ ছাড়া আর কোথাও তাঁর পোস্টার চোখে পড়েনি। মুন্সিগঞ্জের রাম পালসহ কয়েক জায়গায় তোরণ দেখা গেছে। সেখানে মৃণালের ডিজিটাল ব্যানার টাঙানো হয়েছে।

 

মন্তব্য

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

    এ দেশে আইন তো শুধু বিরোধী দলের জন্য।

  • image

    sultan ahmed bulu

    ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

    প্রথম আলোকে ধন্যবাদ সত্য তুলে ধরার জন্য।

  • image

    Admiral General Aladeen

    ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

    আইন সবার জন্য সমান। কোথায় পাবেন - বইয়ের পাতায়।

  • image

    NAhmed

    ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

    Laughing Playing Field

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৮

    গণতন্ত্রের বাংলা অভিধান শোষণতন্ত্র।

  • image

    শেখ সায়ফুল্লাহ

    ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

    আওয়ামীলীগ এই দশটা বছরে যে যে জায়গাতে চরম ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছে তার মধ্যে একটা হল আইন-শৃঙ্খলা। আইনের মাঝে যে বৈষম্য তৈরী করেছে তা নতুন না হলেও এত মারাত্মক মাত্রায় আর কেউ করে দেখাতে পারেনি। সেই আওয়ামীলীগ যখন নির্বাচনকালীন সরকারে আছে তখন আইনের সমপ্রয়োগ হবে তা আশা করাটা বোকামী!

  • image

    Sarwar

    ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

    এছাড়া আরও কত হচ্ছে বা হচ্ছিল তা তো এখনে আসেনি...দুপুর ২টা থেকে রাত ৮ পর্যন্ত নির্বাচনীি প্রচারণা চালানো কথা (মাইক বা সাউন্ড বক্সে) কিনতু কই সকাল থেকে বাজে...

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

    ইসি কি টিনের চশমা পরেছে ??

সব মন্তব্য