মাঠ দখল রাখতে সবই করেছে আ.লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

প্রচারণার শেষ দিনে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেনের কর্মী-সমর্থকেরা ভোট উৎসবে মেতে ওঠেন। গতকাল নগরের কোর্ট পয়েন্ট এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলোমিছিল, স্লোগান, শোভাযাত্রা, জনসভা, কান ঝালাপালা করা মাইকিং, গণসংযোগ ও গানে গানে ভোট প্রার্থনা—গতকাল বৃহস্পতিবার সবই করেছে আওয়ামী লীগ। এসব কর্মসূচিতে মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, হিউম্যান হলার ও গাড়ি-বাস নিয়ে মহড়া দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর মাধ্যমে কার্যত রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের ভোটের মাঠ আওয়ামী লীগের দখলে ছিল।

আর দুই দিন পরই ভোট। আনুষ্ঠানিক প্রচার শেষ হচ্ছে আজ শুক্রবার সকাল ৮টায়। এর আগ পর্যন্ত এভাবেই মাঠ দখলে রাখার কৌশল নেয় আওয়ামী লীগ। দলটির নীতিনির্ধারণী সূত্র জানিয়েছে, ভোটাররা যাতে বুঝতে পারেন মাঠ আওয়ামী লীগের দখলেই আছে, সে জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েই এসব কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিক জনসভা-প্রচার না চালালেও ভোটের ফলাফল প্রকাশ পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ধরে রাখা হবে।

গতকাল সকালে ঢাকার অধিকাংশ মানুষের ঘুম ভাঙে ‘জয় বাংলা, জিতবে এবার নৌকা। শেখ হাসিনার সালাম নিন, নৌকা মার্কায় ভোট দিন’—এই রেকর্ড করা গানে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর তেজ আরও বাড়ে। রাত পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ প্রচার যান ও নির্বাচনী ক্যাম্পগুলোতে বিরামহীনভাবে মাইকে সাত-আটটি গান বেজেছে। এসব গান কেন্দ্রীয়ভাবে রেকর্ড করা। এর বাইরে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীরা তাঁদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল-শোভাযাত্রায় নিজ নিজ আসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো দখলে রাখেন। রাসেল স্কয়ার ও রায়ের বাজার বৈশাখী মাঠে বড় জনসভা হয়।

মিছিল-শোভাযাত্রায় গাড়ির বহর, খোলা ট্রাক, লেগুনা-হিউম্যান হলার আর মোটরসাইকেলের বিপুল মহড়া দেখা গেছে। এসব কর্মসূচিতে কর্মী-সমর্থকদের দলীয় প্রধান, প্রার্থী ও প্রতীকখচিত টি–শার্ট পরতেও দেখা গেছে।

মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, হিউম্যান হলার ও গাড়ি-বাস নিয়ে মহড়া দেওয়ার ঘটনা ঘটে ঢাকার বাইরে প্রায় সব আসনেই। গতকালও কয়েকজন চলচ্চিত্র তারকা ঢাকা ও ঢাকার বাইরে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে অংশ নেন।

অবশ্য নির্বাচন আচরণবিধিতে যানবাহন নিয়ে মহড়া দেওয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে। টি–শার্ট পরে প্রচারও করা যায় না। এমনকি জনসাধারণের চলাচলের পথ রুদ্ধ করে প্রচারও নিষেধ।

পুরো ঢাকা আওয়ামী লীগের দখলে
রাজধানী ঢাকায় আসন ১৬ টি। এর প্রতিটিতেই প্রচারে উৎসবের আমেজ নিয়ে আসেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা।

ঢাকা-৪ আসনে জাতীয় পার্টির সৈয়দ আবু হোসেন দোলাইরপাড় মোড় থেকে জুরাইন, পোস্তগোলা হয়ে শ্যামপুরে মিছিল করেন। করেন পথসভাও।

আজিমপুর এতিমখানা রোড বন্ধ করে পথসভা করেন ঢাকা-৭ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাজি মো. সেলিম। হাজি সেলিম দুই হাত উঁচিয়ে ইশারায় সবাইকে ধন্যবাদ দেন, ভোট চান।

বেলা তিনটার কিছু আগে রাজধানীর মালিবাগ মোড় থেকে রিকশাযোগে প্রচারণা শুরু করেন ঢাকা-৮ আসনে নৌকার প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। এরপর মালিবাগ, শাহজাহানপুর, গুলবাগ ও শান্তিবাগ এলাকায় মিছিল ও গণসংযোগ করেন।

বেলা সোয়া তিনটার দিকে বিশ্বরোড–সংলগ্ন খিলগাঁও শাহি মসজিদের সামনে জমায়েত করেন ঢাকা-৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী। বিশ্বরোড থেকে বিশাল নির্বাচনী প্রচার মিছিল খিলগাঁও পুলিশ ফাঁড়ি, রেলগেট, জোড় পুকুর মাঠ, তিলপাপাড়া, শান্তিপুর, গোড়ান, মাদারটেক, বাসাবো, সবুজবাগ এলাকা ঘোরে। এ সময় বিশ্বরোডে কমলাপুর, সায়েদাবাদগামী সড়কে পৌনে দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল।

দুপুরে ঢাকা-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্বাচনী শোভাযাত্রা ধানমন্ডির নিউ এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল মোড় থেকে শুরু হয়। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়, সিটি কলেজ, জিগাতলা, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর হয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের রাসেল স্কয়ারে গিয়ে জনসভা হয়। অংশ নেন অভিনেতা জাহিদ হাসান, অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন, কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম, এস ডি রুবেল। পুরো সময় আশপাশের সড়ক কার্যত অচল ছিল।

দুপুর থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে গণসংযোগ ও নির্বাচনী মহড়া করতে দেখা গেছে ঢাকা-১১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এ কে এম রহমতউল্লাহকে। তিনি বাড্ডার প্রগতি সরণি, ভাটারা, সাতারকুল এলাকায় এবং সন্ধ্যার পর রামপুরা এলাকায় গণসংযোগ করেন।

ঢাকা-১২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বেলা তিনটার দিকে বিজয় সরণির কলমীলতা বাজার থেকে মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিজয় সরণি থেকে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামোটর হয়ে মগবাজারের দিকে যায়।

রায়ের বাজার বৈশাখী খেলার মাঠ থেকে বেলা আড়াইটার দিকে ঢাকা-১৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাদেক খানের শোভাযাত্রা শুরু হয়। কাটাসুর হয়ে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পৌঁছাতে শুরু হয় তীব্র যানজট। এ সময় পুলিশ এক পাশের সড়ক বন্ধ রাখে।

কয়েক হাজার কর্মী-সমর্থক নিয়ে নির্বাচনী এলাকা ঘোরেন ঢাকা-১৬ আসনের ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লাহ।

কুড়িল-বিশ্বরোড থেকে সকালে প্রচার শুরু করেন ঢাকা-১৮ আসনের সাহারা খাতুন। তিনি শেওড়া বাজার, জোয়ারসাহারা, ভাটারা, খিলক্ষেত এবং উত্তরার বিভিন্ন সেক্টরে ঘুরে জনসংযোগ করেন।

চট্টগ্রামেও সরব আ.লীগ
চট্টগ্রামে আসন ১৬ টি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সব প্রার্থীই কাল মাঠে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করার চেষ্টা করেন। পথসভা, গণসংযোগ, উঠান বৈঠক করেন। চট্টগ্রামে মিছিল-সভা করা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী।

সারা দেশে আরও প্রচারণা
ঢাকার বাইরে প্রায় প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী, তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা জনসভা, মিছিল, গণসংযোগ করেন। ছিল মোটরসাইকেল-ইজিবাইক ও গাড়ির মহড়া। কান ঝালাপালা করা মাইকিংয়ে মাতিয়ে রাখেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা।

নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সকালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় এবং বিকেলে কবিরহাট উপজেলায় নির্বাচনী প্রচার মিছিলে অংশ নেন। রংপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী উপজেলার ভেন্ডাবাড়ি, পানবাড়ি, খেতনারপাড়া, ভীমশহর, জোটবাধ এলাকায় পথসভা করেন।

ঝালকাঠিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ঝালকাঠি ও নলছিটির বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ ও পথসভা করেন। সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ইউনিয়নের দাসেরপুল মোল্লা মার্কেট চত্বরে পথসভায় বক্তব্য দেন। ভোলায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সদর উপজেলার বাপ্তা, শিবপুর ও পূর্ব ইলিশা ইউনিয়নে গণসংযোগ করেন। বিকেলে টাউন কমিটি মাধ্যমিক (বাংলা স্কুল) বিদ্যালয় মাঠে জনসভায় বক্তব্য দেন।

শেরপুরে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী নালিতাবাড়ী উপজেলার শহীদ মিনার মাঠে জনসভায় অংশ নেন। এর আগে শহরে শোভাযাত্রা বের করা হয়।

নীলফামারীতে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের পক্ষে সকালে শহরের জুম্মাপাড়ায় নারী সমাবেশ ও শোভাযাত্রা হয়। সন্ধ্যায় বড় বাজারে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।

গোপালগঞ্জে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিকেলে সদর উপজেলার পৌর পার্কে নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেন।

টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক পাহাড়ি এলাকার শোলাকুড়ি ও ফুলবাগচালা ইউনিয়নে গণসংযোগ করেন।

কুষ্টিয়ার মিরপুর ও ভেড়ামারায় জাসদের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু পথসভা ও জনসভায় ব্যস্ত সময় পার করেন।

কুষ্টিয়া সদরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বিপুল মানুষের জমায়েতে পথসভা বা জনসভা করেন। এগুলোতে ঢাকঢোল বাজিয়ে নেতা-কর্মীরা যোগ দেন।

সিলেটে এ কে আবদুল মোমেনের পক্ষে মিছিল হয়। দুপুরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইকের সঙ্গে বৈঠক করেন মোমেন।

বান্দরবানে বীর বাহাদুর উশৈসিং শহরের রাজার মাঠে বিশাল জনসভা করেন। এর আগে মিছিল জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে।

মেহেরপুরে সাংসদ ফরহাদ হোসেন পৌর শহরে ইজিবাইক শোভাযাত্রা করেন। নাটোরে শহিদুল ইসলাম ছয়টি মাইক্রোবাস ও ৬০টি মোটরসাইকেল নিয়ে প্রচার চালান। লক্ষ্মীপুরে আনোয়ার হোসেন খান শতাধিক মাইক্রোবাস ও পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল নিয়ে বিভিন্ন স্থানে মহড়া দেন।

চলচ্চিত্র তারকা মনোয়ার হোসেন ডিপজল ময়মনসিংহ-১০ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফাহমি গোলন্দাজ বাবেলের পক্ষে প্রচার চালান।

মন্তব্য

  • image

    Mohammad Ali Refai

    ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

    আওয়ামী সাইডের ফিল্ড যে নিখুত নৈপূণ্যে লেভেল করা হয়েছে তার ফলস্বরূপ মাঠের এই অবাধ বিচরণ।নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার একপক্ষীয় ধন্যবাদ পেতেই পারেন।না হয় তাদের অবদানকে খাটো করা হবে!

  • image

    তাসলিমা বেগম

    ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

    মাঠ দখলে রাখতে মামলা হামলা দমন পীড়ন সবই করছে আওয়ামী লীগ শুধু জনগনকে আস্থায় রাখছে না। জনগন যে রাষ্ট্রের মালিক তাদের কর্মকান্ডে সেটা একবারের জন্যও মনে হয়না

  • image

    ibne mizan

    ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

    বিএনপিকে ঘরে ঢুকিয়ে দিয়ে এক তরফ মাঠ দখল করে প্রচারণা। কেউ কমলার ভয়ে পালিয়ে পালিয়ে, আর কেউ খোলা মাঠে গড় করেই চলেছে। ভালই।

  • image

    Khurram Sajid

    ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

    প্রচারপত্র ও ভাড়াটে লোকে পথঘাট দখল ও ভয়ঙ্কর শব্দদুষণ সৃষ্টিতে জয়ী হলেও ভোটারদের মনজয়ের ক্ষেত্রে আওয়ামীলীগ পুরোই অসফল। কাজেই এবারের ভোটের রাজনীতিতে তারা বিপুলভাবে ব্যর্থ!

  • image

    Ikram Sadiq

    ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

    Where are those 95% supporters of BNP?

  • image

    নাম প্রকাশে ভীত

    ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

    জয় আমাদের হবেই। এদেশ শুধুমাত্র জয় বাংলার।

  • image

    শেখ সায়ফুল্লাহ

    ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

    শিরোনামটা মাঠ দখল না হয়ে দেশ দখল হলে ভাল হত!

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮

    বঙ্গবন্ধু আমাদের গোপালগঞ্জের অহংকার আর হাসিনা আমাদের আলো, আমরাই এনে দিয়েছি একটি স্বাধীন দেশ আর এই স্বাধীন দেশে থেকে বঙ্গবন্ধুর মেয়ে হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান কোথায়? আমরা ক্ষমতায় আছি থাকবো অনন্তকাল. আর গোপালগঞ্জ হবে দেশের কেন্দ্র বিন্দু |এই গোপালগঞ্জ হলো দেশের একমাত্র পবিত্র স্থান কারণ বঙ্গবন্ধু এখানে শুয়ে আছেন |

সব মন্তব্য