লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরজুড়ে এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী শহিদ ইসলামের ‘আপেল’ প্রতীকের পোস্টার। প্রচারণার মাঠও তাঁর কর্মীদের দখলে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীরা তাঁর নির্বাচনী মিছিল ও সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন।
এক সপ্তাহ আগেও পরিস্থিতি এমন ছিল না। মহাজোটের প্রার্থী এবং এই আসনের বর্তমান সাংসদ মোহাম্মদ নোমানের প্রচারণায় যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের সবাই। ১৯ ডিসেম্বর হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘বিজ্ঞপ্তি’ দিয়ে সরে দাঁড়ান তিনি।
সাংসদ নোমান কেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন, তা-ই এখন রায়পুরের মানুষের প্রধান আলোচনার বিষয়। সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতারা এ বিষয়ে দুটি শব্দ ব্যবহার করেন—‘টাকার খেলা’। স্বতন্ত্র প্রার্থী শহিদ ইসলামের কাছ থেকে নোমান ‘টাকা নিয়েছেন’, এমনটাই তাঁদের বক্তব্য।
এ বিষয়ে সাংসদ নোমানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর থেকে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ। রাজধানীর ন্যাম ভবনে তাঁর ফ্ল্যাটেও তিনি নেই বলে জানিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী। তবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের বিজ্ঞপ্তিতে তিনি নিজ দল জাতীয় পার্টির অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা, লক্ষ্য নির্ধারণে অনিশ্চয়তা, কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয় ও সিদ্ধান্তহীনতা এবং মহাজোটের স্বতন্ত্র প্রার্থীর (আপেল প্রতীক) নির্বাচনে বহাল থাকার কথা উল্লেখ করেন।
রায়পুর ও লক্ষ্মীপুর সদরের নয়টি ইউনিয়ন নিয়ে লক্ষ্মীপুর-২ আসন। বিএনপি আসনটিকে তাদের ‘ঘাঁটি’ বলে দাবি করে। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে এখান থেকে নির্বাচিত হন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এবার প্রার্থী হয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল খায়ের ভূঁইয়া।
রায়পুর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় রাজনীতিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী শহিদ ইসলামের আবির্ভাব ঘটে বছর দুয়েক আগে। তিনি কুয়েত শাখা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক। মারাফি গ্রুপ অব কোম্পানিজ নামে কুয়েতভিত্তিক একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তিনি। এলাকায় এসেই তিনি আর্থিক অনুদান দেওয়া শুরু করেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশও তাঁর পেছনে এসে জোটে। তবে দলের বড় অংশ তাঁর বিপক্ষে ছিল। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েও পাননি। পরে আপেল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।
বিপুল অর্থের বিনিময়ে সাংসদ নোমানের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে ২২ ডিসেম্বর। ওই দিন শহরের তাজমহল সিনেমা হলের সামনে দলের জরুরি সভায় আওয়ামী লীগের জেলা সভাপতি গোলাম ফারুক প্রকাশ্যে বলেন, ‘বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নোমান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।...অনেক টাকা, অনেক টাকা।’ তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সভায় নেতাদের মধ্যে বিতণ্ডা ও হাতাহাতিও হয়।
রায়পুরে সাংসদ নোমানের ব্যক্তিগত সহকারী শাহ আলম প্রথম আলোকে বলেন, কাজী শহিদ ইসলামের কাছ থেকে ১২ কোটি টাকা নিয়ে তিনি (নোমান) সরে দাঁড়িয়েছেন বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। সাংসদকে কয়েক দিন ধরে ফোনেও পাচ্ছেন না তিনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী শহিদ ইসলাম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত আড়াই বছরে আমি বিপুল কাজ করেছি। বুঝতে পারছেন? প্রায় ৩২ কোটি টাকা মানবসেবায় খরচ করেছি।’
সাংসদ নোমানের সঙ্গে টাকার লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী শহিদ বলেন, ‘উনি ফাইন্যান্সিয়ালি (আর্থিকভাবে) দুর্বল। নির্বাচনে থাকলে বড়জোর পাঁচ হাজার ভোট পেতেন। এসব বুঝেই উনি সরে দাঁড়িয়েছেন। এখানে লেনদেনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
মহাজোটের প্রার্থী থাকার পরও স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী শহিদের প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের আটজন নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু নোমান প্রার্থিতা প্রত্যাহার করলে কেন্দ্রের নির্দেশনায় সবাই এখন শহিদকে সমর্থন দিচ্ছেন।
রায়পুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হায়দার গতকাল বলছিলেন, মহাজোট থেকে নোমানকে প্রার্থিতা দেওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বেশ উজ্জীবিত হন। কিন্তু হঠাৎ তাঁর চলে যাওয়ায় সবকিছু স্তিমিত হয়ে যায়। এখন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সামনে রেখে তাঁরা জোয়ার ওঠানোর চেষ্টা করছেন।
এদিকে বিএনপির প্রার্থী আবুল খায়ের ভূঁইয়া অভিযোগ করেছেন, আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলা, মারধর ও পুলিশের হয়রানির কারণে নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছেন না তিনি। প্রচারণা শুরুর পর থেকে পাঁচটি মামলায় তাঁদের তিন থেকে চার শ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১৭ জনকে।
মন্তব্য
মন্তব্য করুন প্রথমআলো.কম এ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
মাত্র ১২ কোটির লোভ সামলাতে পারলোনা। এই লোক ক্ষমতায় গিয়া দেশের হাজার কোটি চোখের সামনে দেখলে লোভ কিভাবে সামলাবে?
মন যা বলে
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
একদম ঠিক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
দারুন বলেছেন ভাই ।
Deepak Eojbalia
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
Nomination business.
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৯ ডিসেম্বর, ২০১৮
dada Is it also same for your country?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
টাকার লোভ কি করে সামলায়। বিনা ভোটের MP বলে কথা!
Shakib Khan
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
ভালোই রাজনৈতিক কালচার শুরু হয়েছে। বিনা ভোটের MP :P
Mohammad Alamgir
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
good
তাসলিমা বেগম
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
সীমাহীন দুর্নীতি আর লুটপাটের অভিযোগে বিদ্ধ মহাজোট নেতাদের কাছ থেকে এর থেকে বেশী কি আশা করা যায়
Azizul Hoque
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
আওয়ামী- হেফাজতিদের কমেন্টস্ দেখছি না, গর্তে ঢুকছে।
Sengupta
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
নগদ যা পাও হাত পেতে নাও বাকীর খাতা রেখেছে শূন্য আর পেয়ে যাও অগুনিত পূন্য
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
How much u bought him sir?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
পাপুল ৩২ টাকা মানবসেবায় ব্যয় করেছে। কোন কোন খাতে ব্যয় করেছে সেটা একটু জিজ্ঞেস করতেন? গত আড়াই বছরে পাপুল এক দল বখাটে তৈরী করেছে এসব টাকা দিয়ে। বখাটে ছেলেদের ফ্রিতে মোটরবাইক দিয়েছে। রায়পুর থানায় একটা গাড়ি দিয়েছে। তাদের নিজেদের বাড়িতে পারিবারিকভাবে একটা দাতব্য চিকিৎসালয় খুলেছে (পাপুলের ভাই মনজুর কুয়েত বিএনপির আহবায়ক) যেটা উদ্বোধনের দিন ছাড়া আর খোলা হয় নি। মোটকথা পাপুল যা টাকা খরচ করেছে তা মূলত নেতা পাতি নেতা, ক্যাডার, বখাটে ছেলেদের পেছনে। মানবসেবার কিছুই নাই এখানে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
How much money they have? how they have earned huge money
আন্দালিব প্রেতত্মা ২
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
.৩২ কোটি আর ১২ কোটি এবার যদি দুর্নীতির জরিপ নিরপেক্ষ হয় আশা করি বাংলাদেশ আগামি ১০০ বছরেও এর কলংক এড়াতে পারবে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
দুদক এখানে বধির এবং অন্ধ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
‘বিপুল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নোমান নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।...অনেক টাকা, অনেক টাকা।’ আওয়ামী - হেফাজতি যারা ড. কামাল এর একটি সাক্ষাতকারে বলা একটি রাজনৈতিক বক্তব্য নিয়ে হৈচৈ শুরু করেছিলেন, উনারা এখন কোথায় ?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
হা হা হা ....ঘুষ খোর আওয়ামী লীগ ।
Mehedi
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
সমস্যা নাই ক্ষমতাই আসলে সকল টাকা উঠিয়ে নিবে তারা সুদসহ কয়েক গুণ। এখন যদি পারে খরচ করবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
এরা নাকি আবার দেশের উননয়ন করবে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
কাদের সাহেব কি বলবেন তার অপেক্ষা রইলাম ।
শেখ সায়ফুল্লাহ
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
যা ঘটছে সব প্রকাশ্যে! কি অদ্ভুত! - - - একটা বিষয় এখানে স্পষ্ট। মহাজোট এখানে কিছুই না। মূল দল আওয়ামীলীগ। পক্ষে থাকলে সব ঠিক, বিপক্ষে গেলেই গোলমাল। - - - যে লোকটা মাত্র দুই বছর আগে থেক সক্রিয় এবং যার কথাতেই বোঝা যায় টাকা ছিটিয়েছেন রাজনীতিতে দাঁড়ানোর জন্য তার কাছ থেকে কি জনকল্যণ আশা করা যায়? সে যা করছে তা ক্ষমতা বাগানোর জন্য, আর ক্ষমতা যখন বাগাবে তখন নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কিছু যে করবে না তাতে কোন সন্দেহ নেই!
rafayet abdullah
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
এটা রাজনৈতিক খেলা,,, যে বুঝতে এবং সঠিক সময়ে সঠিক খেলাটা দিতে পারবে সেই হবে চ্যাম্পিয়ন।।
Mr.RupoM.
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
সাংসদ নোমানের সঙ্গে টাকার লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী শহিদ বলেন, ‘উনি ফাইন্যান্সিয়ালি (আর্থিকভাবে) দুর্বল। নির্বাচনে থাকলে বড়জোর পাঁচ হাজার ভোট পেতেন। এসব বুঝেই উনি সরে দাঁড়িয়েছেন। এখানে লেনদেনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।’
Alauddin ahmed
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
হায়রে বাংলাদেশ।
ahmed
২৮ ডিসেম্বর, ২০১৮
টাকার সাথে সাংসদের সরাসরি সম্পর্ক বন্ধ করে দিতে হবে । সাংসদের সরাসরি খরচ করার জন্য থোক বরাদ্দের টাকা বন্ধ করে দিলে অনেক চোর ডাকাতরা আর রাজনীতিতে আসবে না !