প্রচারণার শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার বরিশাল জেলার ছয়টি আসনে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের প্রার্থীদের সরব উপস্থিতি ছিল। অন্যদিকে বিএনপি বা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের মাঠে কোনো প্রচার-প্রচারণা ছিল না। এমনকি মাইকিং পর্যন্ত শোনা যায়নি। হামলা-মামলার ভয়ে দলটির নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে বা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। প্রার্থীরা গতকাল ঘর থেকে বের হননি।
বরিশাল-১ (গৌরনদী-আগৈলঝাড়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ গতকাল সারা দিন তাঁর গ্রামের বাড়ি সেরালে অবস্থান করেন। তবে তাঁর পক্ষে এই আসনের প্রতিটি ইউনিয়নে দিনভর প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। বিকেলে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ আগৈলঝাড়ার পয়সার হাট এলাকার আম্বুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে পথসভায় যোগ দেন।
এই আসনের বিএনপির প্রার্থী জহির উদ্দিন স্বপন ১২ ডিসেম্বর এলাকায় ফিরলেও গ্রামের বাড়ি শরিকলে বসেই প্রচার চালাচ্ছেন। তাঁর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের সমর্থকদের হামলার কারণে তিনি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন। প্রচারণা শুরুর পর তাঁর অনেক নেতা-কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর ও তছনছ হয়েছে। ফলে নিরাপত্তাহীনতার কারণে তিনি এবং তাঁর নেতা-কর্মীরা বাইরে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারছেন না। এ অবস্থায় তিনি সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।
বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহে আলম গতকাল দিনভর এলাকায় গণসংযোগ ও উঠান বৈঠক করে ব্যস্ত সময় কাটান। তবে বিএনপির পক্ষে কোনো প্রচার-প্রচারণা, এমনকি মাইকিংও ছিল না। বিএনপির প্রার্থী সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টুর পোস্টার-ব্যানারও তেমন চোখে পড়েনি। উজিরপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাদশা গতকাল দুপুরে বলেন, ‘আমাদের নেতা-কর্মীরা সবাই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিন দিন পর্যন্ত কোনো প্রচার নেই। গত মঙ্গলবারও আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ জন্য তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে গতকাল বিকেলে ঢাকা থেকে এলাকায় ফিরলেও কোনো প্রচার বা পথসভা করতে পারেননি।’
বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে গতকাল প্রচার-প্রচারণার শেষ দিনে নৌকার মহাজোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির বর্তমান সাংসদ শেখ টিপু সুলতানের পক্ষে বাবুগঞ্জ উপজেলা সদরে বিশাল গণমিছিল এবং লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী সাবেক সাংসদ গোলাম কিবরিয়া টিপুর পক্ষে মুলাদীর বাহেরচর এলাকায় অপর একটি গণমিছিল হয়। তবে বিএনপির প্রার্থী জয়নুল আবেদীনের পক্ষে কোনো প্রচারণা, গণসংযোগ ছিল না। এ প্রসঙ্গে বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইসতিয়াক হোসেন তালুকদার বলেন, ‘পুলিশি হয়রানি, হামলা–মামলার কারণে আমরা মাঠে নামতে পারছি না। নেতা-কর্মীরা সব পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।’
বরিশাল-৪ (মেহেন্দীগঞ্জ-হিজলা) আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী পংকজ দেবনাথ। এখানে পংকজ দেবনাথ ও ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী নুরুল করীমের প্রচার-প্রচারণা ও গণসংযোগ থাকলেও বিএনপির প্রার্থী মাঠে নেই। এখানে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নাগরিক ঐক্যের নুরুর রহমান। অভিযোগ আছে, ১৯ ডিসেম্বর নুরুর রহমানের ওপর হামলা চালান আওয়ামী লীগের প্রার্থী পংকজ দেবনাথের সমর্থক নেতা-কর্মীরা। এতে তিনি পায়ে আঘাত পান। বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে নুরুর রহমান গতকাল মেহেন্দীগঞ্জে ফিরে গেলেও তিনি কোথায় আছেন, তা জানেন না দলীয় নেতা-কর্মীরা। এলাকায় তাঁর পোস্টার নেই। প্রচার-প্রচারণাও নেই। মেহেন্দিগঞ্জ পৌর বিএনপির সভাপতি জিয়া উদ্দিন সুজন গতকাল বলেন, ‘আমরা হামলা–মামলার ভয়ে কেউই এলাকায় নেই। নুরুর রহমান এলাকায় ফিরে মেহেন্দীগঞ্জ বাজারের একটি বাড়িতে উঠলে সেখানে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা গিয়ে হাঙ্গামা করার পর তিনি নিরাপত্তার অভাবে অন্যত্র গিয়ে আত্মগোপনে আছেন।’ গতকাল বিকেলে নুরুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার জন্য কয়েকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।
বরিশাল-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের পক্ষে গতকাল বরিশাল নগরের সর্বত্র প্রচার-প্রচারণা চলেছে সমানতালে। বিকেলে তাঁর পক্ষে বিশাল মহড়া হয়। তবে বিএনপির প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষে কোনো প্রচার মাইক ছিল না নগরের কোথাও। সরোয়ার গতকাল সদর উপজেলার সায়েস্তাবাদ এলাকায় গণসংযোগ করেন।
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনেও গতকাল শেষ দিনে প্রচার-প্রচারণায় সরব ছিলেন মহাজোটের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ নাসরিন জাহান রত্না। সকালে তিনি স্থানীয় শ্যামপুর স্কুল মাঠ, বিকেলে সিঅ্যান্ডবি বাজার ও রাতে নিয়মিত এলাকায় পৃথক তিনটি পথসভা করেন। তবে বিএনপির প্রার্থী আবুল হোসেন খান গতকাল সারা দিন তাঁর নিজ বাড়িতেই অলস সময় কাটান।
মন্তব্য
মন্তব্য করুন প্রথমআলো.কম এ
মন্তব্য নেই