ভোটের তিক্ততা ছাপিয়ে সম্প্রীতি

মোহাম্মদ মোস্তফা, ঢাকা ০২ জানুয়ারী, ২০১৯

সাবের হোসেন চৌধুরী গতকাল হঠাৎ করে মির্জা আব্বাসের শাহজাহানপুরের বাসায় সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য যান।  ছবি: প্রথম আলোবেশ তিক্ত পরিবেশেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হয়েছিল ঢাকা-৯ আসনে। গণসংযোগে নেমে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা আব্বাস মাঠে কয়েক দফা হামলার মুখে পড়েছিলেন। অভিযোগের তির ছিল প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন দলের সাবের হোসেন চৌধুরীর কর্মীদের দিকে।

নির্বাচনের পরে সেই তিক্ততা ভুলে সম্প্রীতির পরিবেশ সৃষ্টিতে এগিয়ে এলেন আওয়ামী লীগের বিজয়ী প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তিনি আফরোজা আব্বাসের শাহজাহানপুরের বাসায় গিয়েছিলেন কুশল বিনিময় করতে এবং ভবিষ্যতে একযোগে এলাকার উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান নিয়ে। একইভাবে ঢাকা–৪ আসনে নির্বাচনের দিন হামলায় আহত বিএনপির প্রার্থী সালাহ উদ্দিন আহমেদকে দেখতে হাসপাতালে যান জাতীয় পার্টির বিজয়ী সৈয়দ আবু হোসেন।

গতকল বেলা তিনটায় সাবের হোসেন চৌধুরী আফরোজা আব্বাসের বাসায় যান। তখন অবশ্য তিনি বাসায় ছিলেন না। আফরোজার স্বামী মির্জা আব্বাসের সঙ্গে প্রায় ৪০ মিনিট সময় কাটান সাবের। মির্জা আব্বাস ঢাকা-৮ আসনের বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। ২০০৮ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের আগে ঢাকা-৮ ও ঢাকা-৯ একসঙ্গে ছিল। তখন এই দুই আসন মিলিয়ে ছিল ঢাকা-৬। ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে সাবের হোসেন চৌধুরী আওয়ামী লীগের এবং মির্জা আব্বাস বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন।

আব্বাস দম্পতিকে আগাম না জানিয়ে হঠাৎ করেই সাবের হোসেন চৌধুরী তাঁদের শাহজাহানপুরের বাসায় যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে কোনো নেতা-কর্মী ছিলেন না। তিনি মির্জা আব্বাসের বাসায় দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে করমর্দন করে তাঁদের খোঁজখবর নেন। সাবের হোসেন চৌধুরীর হঠাৎ আগমন এবং হাসিমাখা মুখ দেখে হতবাক হয়ে যান নিরাপত্তাকর্মী এবং সেখানে অবস্থানরত আব্বাসের কয়েকজন সমর্থক।

সাবের হোসেন চৌধুরীকে মির্জা আব্বাসের অফিসকক্ষে বসিয়ে তাঁর আগমনের খবর ভেতরে নিয়ে যান এক কর্মচারী। ঘরোয়া পোশাকেই অতিথিকে অভ্যর্থনা জানান আব্বাস। পরে তাঁরা প্রায় ৪০ মিনিট বিভিন্ন বিষয়ে একান্তে কথা বলেন। এরপর সাবের হোসেন চৌধুরীকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। হাসিমুখেই মির্জা আব্বাস হাত মিলিয়ে সাবের হোসেন চৌধুরীকে বিদায় জানান।

প্রচারণার সময় আফরোজার ওপর হামলার অভিযোগ ওঠার পরই নির্বাচনের পরিবেশ আরও উন্নত করতে নিজ থেকেই আফরোজা আব্বাসকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাসায় যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে গতকাল রাতে সাবের হোসেন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ, চিন্তা ও দর্শনে ভিন্নতা থাকতে পারে, তবে সামাজিকভাবে সম্পর্ক থাকবে না, এটা তো হয় না। উনি (আফরোজা আব্বাস) যেহেতু এই এলাকা থেকে নির্বাচন করেছেন, তাই উনারও হয়তো কিছু উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা থাকতে পারে। সেই সব চিন্তা শোনার জন্যই কথা বলতে গিয়েছি।’ সাবের বলেন, ‘আফরোজা পেয়েছেন ৬০ হাজার ভোট। এলাকার প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ উনাকে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁর মতামতেরও একটা গুরুত্ব রয়েছে।  জনপ্রতিনিধি হওয়ার পর দলমত-নির্বিশেষে বিজয়ী প্রার্থী সকলের প্রতিনিধি। আমি সবাইকে নিয়েই উন্নয়ন করতে চাই।’

মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আফরোজার সঙ্গে সাবের হোসেন চৌধুরী দেখা করতে এসেছিলেন। তবে আফরোজা বাসায় ছিল না। তাই আমার সঙ্গেই কথাবার্তা হয়েছে।’ কোন বিষয়ে কথা হয়েছে জানতে চাইলে মির্জা আব্বাস বলেন, নানা বিষয়ে কথাবার্তা হয়েছে। 

সালাউদ্দিনকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন সৈয়দ আবু হোসেন
নির্বাচনের দিন দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত ঢাকা-৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী সালাউদ্দিন আহমেদকে দেখতে গেছেন ওই আসনে নবনির্বাচিত সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎ​সাধীন সালাউদ্দিনকে দেখতে যান তিনি।

সৈয়দ আবু হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সালাহউদ্দিন আহমেদ ঘুমে ছিলেন। এ সময় ছেলে তানভীর আহমেদ রবিনসহ নিকটাত্মীয়রা উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা আন্তরিকভাবে কথা বলেছেন। আমি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছি।’

মন্তব্য

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ০২ জানুয়ারী, ২০১৯

    বোঝাই যাচ্ছে রিপোর্টার সাহেব অত্যন্ত মুগ্ধ। একে যদি গরু মেরে জুতা দান বলা যেত তাহলেও বলার ভাষা ছিল। এ যেন ডাকাতি করে সর্বস্ব লুট করে আবার পরে গিয়ে সান্তনা দেয়া - ভয় পেয়ো না ভয় পেয়ো না, তোমায় আমি মারবো না।

  • image

    Shamim-BD

    ০২ জানুয়ারী, ২০১৯

    আমার খুব পছন্দের রাজনীতিবিদ সাবের হোসেন চৌধুরী। বাংলাদেশ ক্রিকেটের আজকের এই অবস্থানের জন্য, উনার অবদান অপরিসীম।

  • image

    md.mumun

    ০২ জানুয়ারী, ২০১৯

    তা বেশ ভালো। গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালা। নির্বাচনের আগে কত অভিযোগ করলো, টিভি তে দেখা গেল মহিলাদের নির্যাতনের ছবি,কিন্তু ভদ্রলোক বলে খ্যাত সাবের সাহেব কোনো প্রতিকার করলেন না। রাজনীতি মানুষকে কতটা অন্ধ করে দেয়, সেটাই প্রমান করলেন এই সাবের সাহেব। যায় হোক উনি পাশ করে দেখা করতে গেছেন, এটা ভালো সংকেত। কিন্তু পাশ টা কিভাবে করলো সেই ব্যাপারে সাবের সাহেবের উপলব্ধি কি খুব জানতে ইচ্ছা করে।

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ০২ জানুয়ারী, ২০১৯

    গরু মেরে জুতা দান।

  • image

    sultanul arifin

    ০২ জানুয়ারী, ২০১৯

    লোক দেখানোর জন্য যেন না হয়। এরকম সম্প্রীতির বাংলাদেশই চাই মোরা।

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ০২ জানুয়ারী, ২০১৯

    Congrats Shaber vai!

সব মন্তব্য