নির্বাচনের পর পাহাড়ে আবার ভ্রাতৃঘাতী হত্যা

সাধন বিকাশ চাকমা, রাঙামাটি ০৬ জানুয়ারী, ২০১৯

গত এক বছরে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় ৪৫ জন নিহত হয়েছেন।

নির্বাচনের পর পাহাড়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের মধ্যে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত আবার শুরু হয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) এক কর্মী নিহত হন। এ নিয়ে গত এক বছরে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় ৪৫ জন নিহত হয়েছেন।

আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ), জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) ও ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক দলের মধ্যে এই সংঘাত চলে আসছে। এক একটি হত্যাকাণ্ডের পর দলগুলো পরস্পরের ওপর দায় চাপায়।

জানতে চাইলে পার্বত্য নাগরিক কমিটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান বলেন, ‘পার্বত্য নাগরিক কমিটির উদ্যোগে পাহাড়ে ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত বন্ধের চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে যাচ্ছি। সংঘাত চলমান থাকায় আমরা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছি।’

জানা যায়, ১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির পর জেএসএস ভেঙে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি দল গঠিত হয়। এরপর ভ্রাতৃঘাতী সংঘাতে অশান্ত হয়ে পড়ে পাহাড়। ২০১৫ সালে আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে একটি সমঝোতা হয়।

এরপর সংঘাত প্রায় আড়াই বছর বন্ধ ছিল। কিন্তু ২০১৭ সালে ১৫ নভেম্বর ইউপিডিএফ ভেঙে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামে অপর একটি দল গঠিত হওয়ার ২০ দিনের মাথায় পুনরায় সংঘাত শুরু হয়।

তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত কিছুটা কমে আসে। নির্বাচনে ইউপিডিএফ খাগড়াছড়িতে ও জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) রাঙামাটিতে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই দুই দলের মধ্যে একটা অলিখিত ঐক্যও হয়।

আর এই দুই দল ভেঙে গঠিত জেএসএস এমএন লারমা এবং ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেয়। দুই জেলায় তারা ইউপিডিএফ এবং জেএসএস প্রার্থীর সরাসরি বিপক্ষে কাজ করে। এই দ্বন্দ্ব থেকে নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে পানছড়িতে হামলায় দুজন নিহত হন। তাঁদের একজন ইউপিডিএফ সমর্থক।

এ নিয়ে দল দুটির ওপর প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আঞ্চলিক দল দুটি ক্ষুব্ধ হয়। ইতিমধ্যে রাঙামাটিতে কারচুপির অভিযোগ এনে জেএসএস প্রার্থী এবং দশম সংসদের সাংসদ উষাতন তালুকদার ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন।

১ জানুয়ারির ওই সংবাদ সম্মেলনে জেএসএস (এমএন লারমা) ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্র দখল এবং জাল ভোট দেওয়ার অভিযোগ করা হয়।

এসব কারণে নির্বাচন শেষ হতে না হতেই আবারও সহিংসতা শুরু হয় বলে বিভিন্ন মহল ধারণা করছে। ৪ জানুয়ারি বাঘাইছড়িতে এমএন লারমার কর্মী বসু চাকমা হত্যার ঘটনায় জেএসএসকে দায়ী করে দলটি।

অভিযোগ অস্বীকার করে জেএসএস কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গুনেন্দু বিকাশ চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে সাধারণ মানুষের ভোট কেড়ে নিয়েছে এমএন লারমা। বাঘাইছড়ি উপজেলার তুলাবান ও পাবলাখালী গ্রামে ভোটারদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সাধারণ মানুষ ক্ষেপে গিয়ে হয়তো বসু চাকমাকে হত্যা করেছে। এঘটনায় জেএসএস দায়ী নয়।

তবে সংঘাতের জন্য আঞ্চলিক দলগুলো প্রশাসন এবং সরকারকে দায়ী করছে। ইউপিডিএফের মুখপাত্র মাইকেল চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠীরা ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত জিইয়ে রেখেছে। সরকার চাইলে যেকোনো সময় সংঘাত বন্ধ করতে পারে।

জানতে চাইলে রাঙামাটির পুলিশ সুপার আলমগীর কবির বলেন, ভ্রাতৃঘাতী সংঘাত আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডগুলো নিয়ে তদন্ত চলছে। সংঘাত কমিয়ে আনতে পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে।

 

মন্তব্য

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ০৬ জানুয়ারী, ২০১৯

    পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ার ফলে পাহাড়ে সংঘাত বাড়ছে। যদিও বা সরকার বারবার বলে আসছে চুক্তির বাস্তবায়ন হবে।

সব মন্তব্য