কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জানাজায় শোকার্ত মানুষের ঢল নামে। আজ রোববার কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে এ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রিয় নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জানাজায় আজ সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকেন লাখো মানুষ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠ মানুষে ভরে যায়। মাঠ ছাড়িয়ে পাশের রাস্তা, বাড়ির ছাদ ও সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে মানুষকে জানাজায় অংশ নিতে দেখা যায়।
জানাজায় অংশ নেওয়া ৬৫ বছর বয়সী আবদুল হালিম বলেন, নেতার প্রতি ভালোবাসা থেকে জানাজায় এসেছেন। জেলা ও জেলার বাইরে থেকে বহু মানুষ জানাজায় অংশ নিয়েছেন বলে তিনি জানান।
বেলা সোয়া একটায় অনুষ্ঠিত হয় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের জানাজা। জানাজা পড়ান কিশোরগঞ্জ শহরের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি খলিলুর রহমান। এর আগে সৈয়দ আশরাফের সম্মানে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী ও পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদের নেতৃত্বে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। জানাজায় অংশ নেন কিশোরগঞ্জের ১৩ উপজেলাসহ আশপাশের উপজেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা–কর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ।
জানাজা শুরুর আগে সৈয়দ আশরাফের ছোট ভাই সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম তাঁর প্রয়াত ভাইয়ের জন্য দোয়া কামনাসহ কোনো অপরাধ বা ভুলত্রুটি করে থাকলে মাফ করে দেওয়ার আবেদন জানান। সৈয়দ আশরাফের কাছে কারও কোনো দেনা থাকলে তাঁরা তা পরিশোধ করবেন বলে জানান।
সৈয়দ আশরাফের পরিবারের সদস্যরা ছাড়াও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল হাসান নওফেল, বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতা এবং বিএনপি ও অন্যান্য দলের নেতাদের সৈয়দ আশরাফের জানাজায় অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
জানাজার আগে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শহীদি মসজিদের খতিব মাওলানা আনোয়ার শাহ বলেন, আজ সৈয়দ আশরাফের জানাজায় লাখো মানুষের ঢল দেখা বোঝা যায়, তিনি কতটা ভালো মানুষ ছিলেন। তিনি অনেক ক্ষমতাধর লোক ছিলেন। অনেক টাকা–পয়সা, গাড়ি–বাড়ি করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। শূন্য হাতে বিদায় নিয়েছেন। তাঁর সততায় তাঁর সম্মান আজ এত ওপরে উঠেছে। তাঁর কাছ থেকে সবার শিক্ষা নেওয়া উচিত।
সুনামগঞ্জ জেলা থেকে আসা নাঈমুল ইসলাম বলেন, ‘এত মানুষের ভিড় ঠেলে কফিনে রাখা সৈয়দ আশরাফের মরদেহের কাছে যেতে পারিনি। কিন্তু আমার জীবনে দেখা ক্ষমতাধর এই সৎ, স্বচ্ছ, নিরহংকার ও নির্লোভ প্রিয় লোকটির জানাজায় অংশ নিতে পেরে শান্তি পাচ্ছি।’
এর আগে গতকাল শনিবার দুপুর থেকে প্রশাসনসহ স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আজ সকালের মধ্যে জানাজার সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়। তৈরি করা হয় সৈয়দ আশরাফের মরদেহ রাখার মঞ্চ। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকেন পুলিশ ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদস্যরা।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফ ১৯৯৬ সাল থেকে কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলা) আসনে টানা পাঁচবার নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন।
গত বছরের জুলাই মাসে ফুসফুসে ক্যানসারের কারণে তাঁকে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি বিজয়ী হন। কিন্তু সাংসদ হিসেবে শপথের আগেই গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে মারা যান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
আরও পড়ুন
মন্তব্য
মন্তব্য করুন প্রথমআলো.কম এ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
০৬ জানুয়ারী, ২০১৯
একজন উদার গণতন্ত্রী রাজনীতিবিদ চলে গেলেন। এই সময়ে তার উপস্থিতি প্রয়োজন ছিল। তার না ছিল ক্ষমতার দম্ভ, না ছিল অহেতুক আস্ফালন। তাই হয়ত তিনি নিজেকে ধিরে ধিরে সরিয়ে নিচ্ছিলেন অন্তরালে। তার বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করি।
Md. Iman Ali Emon
০৬ জানুয়ারী, ২০১৯
ভাল মানুষগুলি এভাবেই সকলকে কাঁদিয়ে চলে যান না ফেরার দেশে ! সে আমার একজন পছন্দের লোক ছিলেন ।আল্লাহ্ তাকে জান্নাত নছিব করুন । আমিন ।
Himu mama
০৬ জানুয়ারী, ২০১৯
ভালো মানুষকে সবাই ভালবাসে
Himu mama
০৬ জানুয়ারী, ২০১৯
আল্লাহ ওনাকে বেহেস্ত নসীব করুন
শিপন England
০৬ জানুয়ারী, ২০১৯
ভাল মানুষের স্থান কমই হয় দুনিয়ায়, আল্লাহ দ্রুত তাদেরকে নিয়ে নেন তার যত্নে ভাল রাখুন আপনার হেফাজতে, আমিন
abdul moyeen
০৬ জানুয়ারী, ২০১৯
মানুষের নেতা। তিনি বাংলাদেশের সব মানুষের নেতা - selfless, honest, loving, bold, down-to-earth and leader of everyone. এই নেতাদের জন্য সেই প্ৰসিদ্ধ উক্তি তৈরী হয়েছিল: Of the people, by the people, for the people. আমাদের নেতারা যেন উনার মত হয় সেই কামনা করছি। আল্লাহ উনাকে বেহেস্ত দান করুন।
শামীম রেজা
০৬ জানুয়ারী, ২০১৯
আল্লাহ ওনাকে বেহেস্ত নসীব করুন।