আ.লীগের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে শরিকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

• আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪-দলীয় জোট গঠিত হয় ২০০৪ সালে
• তারা জোটবদ্ধ আন্দোলন ও গত তিনটি নির্বাচন একসঙ্গে করেছে
• প্রথম দুই সরকারের মন্ত্রিসভায় শরিকদের একাধিক নেতা মন্ত্রী হন
• আওয়ামী লীগের এবারের মন্ত্রিসভায় শরিকদের কাউকে রাখা হয়নি
• আ.লীগের সঙ্গে শরিকদের দূরত্বের সূত্রপাত এখান থেকেই

নতুন সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের পর থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে ১৪-দলীয় জোটের শরিকদের। আওয়ামী লীগ শরিকদের বিরোধী দলের ভূমিকায় দেখতে চাইলেও তাতে রাজি হচ্ছে না তারা। তবে ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর পর বিষয়গুলোর সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করছেন জোটের নেতারা।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪-দলীয় জোট গ​ঠিত হয় ২০০৪ সালে। এরপর তারা বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ আন্দোলন এবং পরপর গত তিনটি নির্বাচন একসঙ্গে করেছে। এর মধ্যে প্রথম দুই সরকারের মন্ত্রিসভায় শরিক দলগুলোর একাধিক নেতাকে মন্ত্রী করা হলেও এবারের মন্ত্রিসভায় শরিকদের কাউকে রাখা হয়নি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্বের সূত্রপাত সেখান থেকেই বলে জানা গেছে। নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানেও দেখা যায়নি শরিকদের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের।

সর্বশেষ গত শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বিজয় সমাবেশেও বিদায়ী মন্ত্রিসভার দুই সদস্য ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ শরিক দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের দেখা যায়নি। যদিও ওই সমাবেশে যথাযথভাবে দাওয়াত পাননি বলে জানিয়েছেন শরিক কয়েকটি দলের নেতারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জোটের দুই নেতা জানান, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নতুন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে ১৪ দল। বিরোধী দলের ভূমিকায় একাধিক দলকে সক্রিয় রেখে বিএনপিকে আরও চাপে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। সংসদে আসার বিষয়ে বিএনপির সিদ্ধান্ত এবং দলটির পরবর্তী কর্মসূচি বুঝেই ১৪ দলের পরিকল্পনা ঠিক করা হবে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা। তাঁর মতে, শরিকদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

তবে এ কৌশলে পুরোপুরি ভরসা পাচ্ছেন না শরিকদের অনেকে। তাঁরা মনে করছেন, একচেটিয়া বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ নিজেই শরিকদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছে। বিএনপিকে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভাবনার কিছু নেই। বিএনপি যে পরিস্থিতিতে পড়েছে, তা থেকে ঘুরে দাঁড়াতেই তাদের হিমশিম খেতে হবে। তাই সরকার কার্যকর সংসদ দেখাতে মহাজোটের অংশীদার জাতীয় পার্টির পাশাপাশি ১৪ দলের শরিকদে​রও বিরোধী দলের ভূমিকায় রাখতে চায়। তবে ১৪ দলের একাধিক নেতা এ–ও জানান, শরিকদের কেউ কেউ মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ার আশা এখনো ছাড়েননি। তাই তাঁরা চুপচাপ আছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্বের বিষয়ে গণমাধ্যমে কথাবার্তা বলে সরকারের বিরাগভাজন হতে চাইছেন না।

জানতে চাইলে জাসদ একাংশের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের আগের ও পরের পরিস্থিতিতে অনেক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।

তবে জোটের আরেক শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, রাজনৈতিক কারণেই জোটের প্রাসঙ্গিকতা টিকে আছে। তাই সংকট কেটে যাবে। তিনি জানান, জোটের প্রধান নেতা শেখ হাসিনার প্রতি তাঁদের পূর্ণ আস্থা আছে।

এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের শরিকদের বিরোধী দলের ভূমিকায় রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন। শনিবার রাজধানীর বনানীতে জাপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান বলেন, ১৪ দলের সংসদ সদস্যরা জাতীয় পার্টির সঙ্গে বিরোধী দলের ভূমিকায় এলে সংসদ আরও প্রাণবন্ত হবে। সম্মিলিতভাবে দেশ ও দেশের মানুষের পক্ষে কথা বলে সংসদকে কার্যকর রাখা যাবে।

আগামী মার্চ থেকে শুরু হওয়া উপজেলা নির্বাচন সামনে রেখে ইতিমধ্যে দল গোছানোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন শরিকেরা। বর্তমান পরিস্থিতিতে দলীয় কৌশল ঠিক করতে গতকাল রোববার ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্যরা বৈঠক করেছেন। আগামী ২ ও ৩ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডেকেছে হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভা ডেকেছে জাসদের (আম্বিয়া) একাংশ। দলগুলো এসব সভা থেকে আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঠিক করবে।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আকস্মিকভাবে মারা যাওয়ায় গাইবান্ধা-৩ আসনের ভোট বাতিল করা হয়েছিল। নতুন করে তফসিলের পর ২৭ জানুয়ারি এখানে ভোট হবে। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ ইউনুস আলী সরকারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছেন জোটের শরিক জাসদের প্রার্থী খাদেমুল ইসলাম। দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সেখানে প্রচারে আছেন জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতারসহ কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকালও তাঁরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সমাবেশ করেছেন।

জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও জোটের ভেতরের ​পরিস্থিতি সম্পর্কে বক্তব্য জানতে গাইবান্ধায় অবস্থানরত হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

এ দিকে গতকাল রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর বৈঠক শেষে দলটির পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে এক বিবৃতি পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়, সম্প্রতি ১৪ দলের প্রাসঙ্গিকতা ও অবস্থান নিয়ে কিছু বিভ্রা‌ন্তিমূলক বক্তব্য এসেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি স্পষ্টভাবে মনে করে, ২০০৪ সালে যেসব ভিত্তিতে ১৪ দল গঠিত হয়েছিল, তার মূল বিষয়গুলো এখনো প্রাসঙ্গিক। এই অবস্থায় জাতীয় নির্বাচনের বিজয় সুরক্ষায় ১৪ দলের ঐক্যবদ্ধতা ও এযাবৎকালের অবস্থান ও আচরণ সুর‌ক্ষিত করা প্রয়োজন।

আরও পড়ুন:

মন্তব্য

  • image

    আন্দালিব

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    আওয়ামীলীগ জানে কখন কোন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হয়

    • image

      msIqbal

      ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

      হ, হাচাই কইছেন! কাজের বেলায় কাজী, কাজ ফুরালে পাজী!!

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    আওয়ামী লীগ সঠিক কাজ করেছে।

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    Who cares !!

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    মধু নাই, তাই তেলও নাই।

  • image

    msIqbal

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    হা হা হা !!!

  • image

    Shazzadul Islam Sahil

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    এখন দূরত্ব থাকাই ভালো!

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    AL knows very well that they are liabilities. Therefore, it is normal to treat them like that.

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    দিলীপ বড়ুয়া জানান, ”জোটের প্রধান নেতা শেখ হাসিনার প্রতি তাঁদের পূর্ণ আস্থা আছে।” মন্ত্রিত্ব পাবার ব্যাপারে পূর্ণ আস্থা আছে। এই হলো ওনাদের রাজনীতি!

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    হালুয়া–রুটি কেউ ছাড়তে চায় না

  • image

    Shakib Khan

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    এখন তো সময় দূরে থাকার!!!

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    AL done wrong!

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    I feel very sorry for them. They are very loyal to AL but they have betrayed their conscience. They know very well how they were elected and how far they can go. It will be better for them to wait like a beggar. Actually they don't believe in people's vote rather they took mercy from the vote riggers therefore, what happened to is normal.

  • image

    msIqbal

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    শরিক দলগুলোকে সরকারের বাইরে রাখার কৌশলের মাধ্যমে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তার নিজস্ব সৃষ্টিশীলতায় সংসদে 'অটোমেটিক' বিরোধী দল সৃষ্টির প্রচেষ্টা সফল হয়েছে বলা যায়! শরিক দলগুলো জোটবদ্ধ নির্বাচন করে সরকারের বাইরে থাকার যৌক্তিকতা নিয়ে সরকারের সাথে বিরোধে জড়ানোর মাধ্যমে তারা নিজের অজান্তেই বিরোধী দলে পরিণত হয়েছে!

    • image

      MD. FAISAL

      ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

      এটা ‘সৃষ্টিশীলতা’ নয়, রাজনৈতিক ভাঁড়ামি। এসব কৌতুকময় আচরণ দ্বারা সাধারণ জনতার মাঝে কি পরিমান উপহাস তৈরী করছেন – তা বোঝার বিচার-বুদ্ধিও আপনাদের এখন নেই।

    • image

      msIqbal

      ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

      এতবুদ্ধি দিয়ে কি করুম ভাই? বুদ্ধি দিয়ে কি পেট ভরব? নাকি গদি মিলবো!

  • image

    Ashrafuzzaman

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    জনবিচ্ছিন্ন এইসব দলকে রাখা আর না রাখা সমান কথা, এরা শুধু সুবিধা নেওয়ার জন্যই ..... করে।

  • image

    Sohel S.parvez

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    এটাই তো স্বাভাবিক। বর্তমানে বিরোধী দল নেই বললেই চলে। নিজ দলের খাই খাই লোকদের আগে থামাতে হবে তারপর জোটের স্বার্থ। এখন জোটের নেতারা যদি মনে করেন তাদের মন্ত্রিত্ব ফিক্সড!! তাহলে তো হয় না!! বড় বড় আওয়ামী লীগ নেতারা মন্ত্রী হতে পারেন নাই যেহেতু,তাদের আপাতত চুপ থাকাই উচিত।

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    প্রশাসন ম্যানেজ করেন শরিক দল লগবেনা

  • image

    Shazzadul Islam Sahil

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    এখন দুরুত্ব থাকাই ভালো! ক্ষমতায় একেবারে হেলে না পড়ে কিছুটা দূরত্ব রেখে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে দেশের জন্য কাজ করুক!

  • image

    msIqbal

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, উহা দূরেও ঠেলিয়া দেয়!!!

  • image

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক

    ২১ জানুয়ারী, ২০১৯

    শরিকদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে আওয়ামী লীগের। এখন আওয়ামী লীগ একাই একশ।

সব মন্তব্য