একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আ.লীগ-বিএনপির মধ্যে বিতর্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ২৬ জুন, ২০১৯

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয় সংসদে সরকারি দল ও বিএনপির সাংসদদের মধ্যে বিতর্ক হয়েছে। সরকারি দলের জ্যেষ্ঠ সাংসদ মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কৌশলের কাছে বিএনপি হেরেছে। বিএনপি ড. কামাল হোসেনকে ‘ভাড়া’ করলেও তিনি কাজ করেছেন আওয়ামী লীগের জন্য। তিনি মাঠ ফাঁকা করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ফাঁকা মাঠে ভোট দিয়েছে।

এর জবাবে বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ বলেন, এখানে কৌশলের কোনো বিষয় নেই। প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার করেও
তা রক্ষা করেননি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের মতো কোনো নির্বাচন অতীতে হয়নি। এটি ছিল রাতের নির্বাচন। যে কারণে এই সংসদকে বলা হচ্ছে ‘মধ্যরাতের সংসদ’।

গতকাল মঙ্গলবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে ওই দুই সাংসদ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, রাজনীতি হচ্ছে কৌশল। বিএনপির বন্ধুরা বারবার ভুল করেছে। নাসিম বলেন, ‘তিনি (ড. কামাল) আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করে মাঠ খালি করিয়ে দিলেন আর আমরা ফাঁকা মাঠে গোল দিলাম। এই হচ্ছে তাদের ভাড়াটের মুরদ। তিনি বলেন, তারেক রহমান এসে বিএনপির ১২টা থেকে ১৩টা বাজিয়ে দিয়েছেন। বিএনপি এখন আন্দোলনও করতে পারে না।

মো. নাসিমের বক্তব্যের জবাবে হারুনুর রশীদ বলেন, সংসদে বারবার বলা হচ্ছে যে কৌশলে বিএনপি হেরে গেছে। অথচ একাদশ সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে জাতিসংঘ, টিআইবি, যুক্তরাষ্ট্র, নিউইয়র্ক টাইমস, দিল্লির গবেষক-বিশ্লেষকেরা প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘যে সংসদে দাঁড়িয়ে কথা বলছি, সেই সংসদ নির্বাচনে আগের রাতেই ব্যালট ভর্তি করা হয় আর পরদিন তা গণনা করা হয়।’

হারুন বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় সংলাপে প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার করেছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হবে। বিএনপির নেতা–কর্মীদের মামলার তালিকা দিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু নির্বাচনে বিএনপির ২২ জন প্রার্থীকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৪০ জন প্রার্থী ভয়ানকভাবে আহত হন। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে হারুন প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনি জাতীয় সংলাপের সময় ওয়াদা করেছেন, সে ওয়াদা কি পূরণ হয়েছে?’

হারুন বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য অনুযায়ী গায়েবি মামলা বলে কিছু নেই। গত ১০ বছরে বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে ৯০ হাজার মামলা হয়েছে। অধিকাংশই ভুয়া। প্রায় ২৫ লাখ আসামি । তিনি এসব মামলা নিয়ে একটি সংসদীয় কমিটি করার দাবি জানান।

গত ১০ বছরে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিখোঁজ হয়েছে দাবি করে হারুন বলেন, ‘জানি না এখানে কথা বলে বাড়ি ফিরে যেতে পারব কি না। রাস্তা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে গিয়ে আমার ভাগ্যে ইলিয়াসের ভাগ্য জুটবে কি না, সালাহউদ্দিনের ভাগ্য জুটবে কি না, এ কথা বলতে পারছি না।’

হারুনের বক্তব্যের একপর্যায়ে সরকারি দলের সদস্যরা হইচই করে প্রতিবাদ জানাতে থাকলে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী হারুনের উদ্দেশে বলেন, ‘মাননীয় সদস্য, আপনি বাজেটের ওপর বলুন।’ জবাবে হারুন বলেন, বক্তব্যের ধারা পরিবর্তন করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটি অদ্ভুত সরকার। মহাজোটের নামে ভোট করে শরিকদের বিরোধী দলে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের চেহারা মলিন। রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ওনারা নিজেদের অবস্থান নিয়ে বিব্রত। হাসানুল হক ইনু বলেছেন, ফরমাশি বিরোধী দল দিয়ে সংসদ কার্যকর করা যাবে না। এগুলো সত্য।

হারুন দাবি করেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে বালিশ–কান্ডে ছাত্রদল বা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত—এটা অবিশ্বাস্য।

বহুমুখী ব্যবসায়ী সরকারি দলে

নাসিম বলেন, ‘ঋণখেলাপিদের ছাড় দেওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। কৃষকেরা ১–২ হাজার টাকার জন্য সার্টিফিকেট মামলার আসামি হবে আর ঋণখেলাপিরা আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নেবে, এটা কেন হবে? কোর্ট এত কথা বলেন, কোর্ট কেন স্থগিতাদেশ দেন।’

তিনি বলেন, কিছু ব্যবসায়ী আছেন, তাঁরা ব্যাংকের মালিক, গার্মেন্টস, ওষুধ কোম্পানি এমনকি সংবাদপত্রেরও মালিক। এই ধরনের বহুমুখী
ব্যবসায়ী সরকারি দলে ঢুকে আছেন। তাঁর মতে, সংসদ হবে রাজনৈতিক নেতাদের। যারা ব্যবসায়ী, কোনো দিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেনি, তারা সুখের পায়রা। আওয়ামী লীগ সরকারের থেকে লাইসেন্স নিয়ে তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলছে। তারা সংবাদপত্রের মালিক হয়ে দিনের পর দিন লিখে যাচ্ছে।

মো. নাসিম সঞ্চয়পত্রে উৎসে কর প্রত্যাহারের দাবি জানান।

আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মঈনউদ্দীন খান বাদল রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতীয় সংসদে ‘ক্যামেরা সেশন’ দাবি করেন।

কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রাখার সমালোচনা হলেও এর পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দিলে নতুন কর্মসংস্থান হবে। অন্যদের মধ্যে সরকারি দলের সাংসদ আ স ম ফিরোজ, কামাল আহমদ মজুমদার, নুরুজ্জামান আহমদ, মো. ইসরাফিল আলম, ফজিলাতুন্নেসা প্রমুখ বক্তব্য দেন।

মন্তব্য

মন্তব্য নেই